টাকা ফেরাতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ১২৯ খেলাপিকে তলব

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল ) ১৮ শ কোটি টাকা ফেরত আনার চেষ্টায় ১২৯ জন ঋণ খেলাপিকে তলব করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2021, 02:38 PM
Updated : 7 April 2021, 03:54 PM

আগামী ২৪ ও ২৫ মে বেলা সাড়ে ১০টায় তাদের সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে; এই খেলাপিদের মধ্যে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারও রয়েছেন।

আইএলএফএসএল থেকে নেওয়া ঋণ কখন তারা ফেরত দিতে পারবেন, হাজির হয়ে সে ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে এবং অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করতে হবে, যে তারিখের মধ্যে তারা সে ঋণ পরিশোধ করবেন।

সেই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের জন্য হাজিরার দিন তাদের একটি কিস্তি-পরিকল্পনাও নিয়ে আসাতে বলা হয়েছে; যাতে সুবিধাজনক সময়ের মধ্যে তারা পর্যায়ক্রমে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন।

আইএলএফএসএল -এর আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের কোম্পানি বেঞ্চ গত ১৬ মার্চ এ আদেশ দেয়। সোমবার আদেশটি প্রকাশের পর বুধবার তা সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইএলএফএসএল -এর আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এই খেলাপিরা আর্থিক এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮ শ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।

“তফসিল-এ এব তফসিল-বি অন্তর্ভুক্ত এই ১২৯ ঋণ খেলাপিকে ঋণ ফেরত দিতে বিভিন্ন সময় নোটিস পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। যে কারণে তাদের তলবের আরজি জানিয়ে আবেদনটি করা হয়।”

এই ১২৯ ঋণ খেলাপির মধ্যে পি কে হালদারও রয়েছেন। চারটি কোম্পানির ও নিজ নামে পি কে হালদার ২৫৩ কোটি ৯৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৩ টাকা ঋণ নিয়েছেন বলে জানান এই আইনজীবী।

কারণ দর্শাও নোটিস জারি করে আদালত জানতে চেয়েছে, জনগণের টাকা অথবা তহবিল আত্মসাতের অভিযোগে এসব ব্যক্তি ও সত্তার বিরুদ্ধে কার্যক্রম শুরু করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না।

আদেশের অনুলিপি পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮০১ কোটি ২ লাখ ১৪ হাজার ৪১১ টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না- এমন ১২৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম আদালতে দাখিল করা হয়।

প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)

পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এমন ২৮৬ জন ঋণ খেলাপিকেও তলব করেছিল হাই কোর্টের এই বেঞ্চ। 

সাময়িক অবসায়ক আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া তালিকা দেখার পর গত ২১ জানুয়ারি তলবের ওই আদেশ দিয়েছিল আদালত।

সে আদেশে আদালত ২৮৬ জনকে দুই ভাগে হাজির হতে দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ১২২ ঋণ খেলাপি আদালতে হাজির হননি।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনে আদালত।

তাদের বক্তব্য শোনার পর তলবে হাজির না হওয়া ১২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। 

ওই আদেশে বলা হয়, পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হল।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

কোম্পানিগুলো হল- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।

এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।

পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারে কয়েক মাস আগেই ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে।