সোমবার লকডাউনের প্রথম দিন রাজধানীতে বিধিনিষেধ মানার ক্ষেত্রে দেখা গেছে ‘ঢিলেঢালা’ভাব। আর তা মানাতেও খুব বেশি কড়াকড়ি দেখা যায়নি।
ভোর ৬টায় লকডাউনের শুরু থেকে ঢাকায় বাস চলছে না। তবে প্রাইভেট কার, অটোরিকশা ও রিকশা চলছে রাস্তায়।
সীমিত পরিসরে সরকারি অফিস-আদালতের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় কেউ কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ বা রিকশায় কর্মস্থলে যাচ্ছেন। বাস বন্ধ থাকায় তাদের সমস্যা বেড়েছে।
নিধিনিষেধ মেনে অধিকাংশ শপিং মল বন্ধ রাখা হলেও লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিতে নিউ মার্কেট এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
রামপুরা টিভি সেন্টারের কাছে রড-সিমেন্টের দোকানদার মোত্তালেব আহমেদ লকডাউনের প্রথম দিনও দোকান খুলেছেন।
প্রশ্ন করতেই বললেন, “সরকারি অফিস খোলা, বইমেলা খোলা, স্টেডিয়ামে খেলাধুলা হচ্ছে, তাহলে সরকারের কড়াকড়ি শুধু আমাদের বেলায়? এই দোকানেই আমার সংসার চলে। পেটের তাগিদে দোকান খোলা রেখেছি স্বাস্থ্য বিধি মেনেই।”
গুলবাগের গলিতে বসে থাকা রিকশা চালক শুক্কর আলী জানালেন, লকডাউনের সকালটা তার ভালোই গেছে।
“স্যার সকাল থেকে দুই ঘণ্টায় সাতজন প্যাসেঞ্জার পাইছি। শুকরিয়া। তবে গলিতেও কেউ রিকশায় উঠতে চায় না। মেইন রোডে প্যাসেঞ্জার পাওয়া যায়। লকডাউনে বইসা থাকলে আমাগো পেটেও লকডাউনে পড়ব।”
লকডাউনের কারণে অনেকেই ক্যাশ টাকা হাতে রাখতে চাইছেন। ফলে ব্যাংকের সামনে দেখা গেল গ্রহকদের দীর্ঘ লাইন।
মালিবাগে মৌচাক মার্কেট, টুইন টাওয়ার, শান্তিনগরে কর্ণফূলী সুপার মার্কেটসহ বড় বড় শপিং মলগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে সড়কের পাশে কিংবা গলিতে সব দোকান-পাটই খোলা।
কাকরাইলের মোড়ে একজন ট্রাফিক কনস্টেবল জানালেন, রিকশা ও প্রাইভেট কারের সংখ্যা বেশি। সেজন্য হঠাৎ হঠাৎ জট লাগে রিকশায়।
রামপুরা, মালিবাগ, কাকরাইল, শান্তিনগর এলাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁও খোলা দেখা গেছে। শান্তিনগর ও মালিবাগের রেলগেইটে কাঁচাবাজারে ছিল ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। সেখানে মানুষজনের মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার প্রবণতা কম দেখা গেছে। অনেকে মুখে মাস্কও ছিল না।
তবে মিরপুরে লকডাউনের কারণে ব্যস্ততা অনেক কম দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এ এলাকার সড়কগুলো ছিল ফাঁকা।
মিরপুর ১০ নম্বর, সাড়ে এগারো ও কালশী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেলে অল্প কিছু প্রাইভেট কার, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।
পল্লবীর বিসমিল্লাহ শপিং সেন্টারের বিক্রেতা জামাল উদ্দীন বলেন, “সকালে তো কাস্টমার একটু কমই থাকে। একটু পরই বিক্রি বাড়বে। লকডাউন হলে কি হবে, মানুষকে খেতে হবে না?”
লকডাউনে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার অনুমতি নেই। কিন্তু মিরপুর এলাকায় কোথাও তা মানতে দেখা গেল না।
মিরপুরের মুসলিম বাজারের একটি খাবার হোটেলের মালিক আলতাফ হোসেন বললেন, “নিম্ন আয়ের মানুষজন এখানে খেতে আসে। তার কাজ করে খায়, খাবে কোথায়?”
রাস্তায় পথচারীদের সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সমান সচেতন নন। মাস্ক ছাড়াই অনেককে চলাফেরা করতে দেখা গেল মিরপুর এলাকায়।
মিরপুর রূপনগর এলাকা ঘুরে দেখা গেল, বাস ছাড়া সব ধরনের যানবাহনই চলছে। সব ধরনের দোকানপাটও খোলা রাখা হয়েছে।
নয়ন ইলেক্ট্রিকের ম্যানেজার আবুল হাশেম বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাই আমরা দোকান খুলেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হলে আমরা দোকান বন্ধ করে দেব।”
বেরা সাড়ে ১১টার দিকে রূপনগর থানার পুলিশ এসে দোকান বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়ে গেলে দোকানপাট বন্ধ করতে দেখা যায়। তবে নির্দেশনা অনুযায়ী নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে মুদি দোকানগুলো খোলা রাখা হয়েছে।
প্রধান সড়কের দুই পাশে সবজি ও ফলের দোকানও খোলা রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে এসব দোকান থেকে বাজার করতে দেখা যাচ্ছে।
কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী এলাকা ঘুরে দেখা গেল সড়ক জুড়ে প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা চলছে। আর রাস্তায় রয়েছে মানুষের সরব উপস্থিতি।
সকালে কল্যাণপুর এলাকায় দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলো ছিল বন্ধ। মিরপুর থেকে শ্যামলী যাওয়ার পথে একটি দোতলা বিআরটিসি বাসসহ কয়েকটি বাস চলতে দেখা যায়।
মোহাম্মদপুর, শ্যামলী এলাকার রাস্তার পাশের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানগুলো খোলাই ছিল।
প্রতিদিন সকালে আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের পাশের সড়কে মাছের দোকান বসে; সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া 'লকডাউনেও' সেসব দোকান বসেছে। মাছের দোকান, মুরগি ওয়ালা ও ভ্যানগাড়িতে তরকারিওয়ালাদের হাঁকডাকে পুরো এলাকা সরগরম।
লালবাগের পুলিশ পরিদর্শক শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথম দিনতো, তাই কিছুটা ...ঘটলে। পুলিশ কাজ শুরু করছে। আশা করি জনগণও বুঝবেন, কেন তাদের নিষেধ করা হচ্ছে।”