গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে সরকারকে তৎপর হতে তাগিদ

একাত্তর সালে বাঙালিদের উপর পাকিস্তানী বাহিনীর চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকারকে তৎপর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2021, 06:05 PM
Updated : 25 March 2021, 06:05 PM

‘১৯৭১ এর গণহত্যার স্মরণ, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জনে কর্মসূচি নির্ধারণ’ শীর্ষক আলোচনায়, এ বিষয়ে প্রবাসীদের আরও সংগঠিত হওয়ার পরামর্শও ওঠে আসে।

গণহত্যার ৫০তম বছরে ভার্চুয়াল এ আলোচনার আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) এবং অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যায় সম্পৃক্তদের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ড. নমিতা হালদার বলেন, “দেশে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। কিন্তু এ বিষয়টিকে আমরা আন্তর্জাতিক মহলে কেন নিতে পারছি না? এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় তেমন উদ্যোগ দেখি নাই সেইভাবে। এখন সময় এসেছে, এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্রকে সম্পৃক্ত হতে হবে।”

অস্ট্রেলিয়ার ম্যাককোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে গবেষণায় জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

“জেনোসাইডকে যেভাবে আমরা বাংলাদেশে দেখি, বাইরের পার্লামেন্টে বা রাষ্ট্রীয় কোনো সংগঠনে সেটাকে তুলে ধরতে উপযুক্ত গবেষণাপত্র থাকা দরকার। যাতে বুঝা যায় যে, আন্তর্জাতিকভাবে আইনগত দিক দিয়ে সব শর্ত মেনে এটি জেনোসাইডের পর্যায়ে পড়ে।

“পুরো বাঙালি জাতির উপর যে জেনোসাইড হয়েছে, সে বিষয়ে সিরিয়াস কোনো গবেষণা নেই। বিদেশে প্রচার করার জন্য, তাদের কনভেন্স করার জন্য এটার দরকার আছে।”

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকারকে জোরালোভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রবাসীদের এটি করার জন্য যে ইউনিটি দরকার, সেটি আমাদের নেই। এটি আমাদের মিশনগুলোর নেতৃত্বে হওয়া উচিত, যাতে সকল বাংলাদেশিকে এক প্লাটফর্মে আনা যায়। এজন্য ফরেন পলিসির একটি দিক থাকতে হবে, আমাদের সাথে যোগাযোগ করবে। আর গভর্মেন্ট টু গভর্মেন্ট যোগাযোগ হলে এই স্বীকৃতি আদায়টা সহজ হবে। সেজন্য আমাদের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।”

বাংলাদেশ এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করলে, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী শক্তিগুলো এর বিরুদ্ধে যেতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

“তারা সতর্ক আছে, তৎপর হয়ে আছে। বাংলাদেশ যাতে আন্তর্জাতিকভাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে না পারে। জাতিসংঘে যাতে এটি না আনতে পারে। কিন্তু এসব মোকাবেলা করা সম্ভব। এজন্য আমাদের ইউনিটি দরকার, প্রচার দরকার, গবেষণা দরকার। এগুলোকে এক করতে পারলেই এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় সম্ভব হবে।”

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য শিরীন আখতার জানান, দেশে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে নানাভাবে কাজ হলেও আইনগত প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে।

সংসদে গণহত্যা দিবসের প্রস্তাব তোলা এই সংসদ সদস্য বলেন, “২০১৭ সালে সংসদে এটি সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল, প্রস্তাব পাস হয়েছিল। কিন্তু সংসদে প্রস্তাব গ্রহণ হলেও এটি সাংবিধানিক স্বীকৃতি নয়। এজন্য সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব রয়েছে। এটির স্বীকৃতির জন্য সংবিধানকে সংশোধন করতে হবে। সংসদ সদস্যদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে। আমি সহকর্মীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।”

প্রবাসীদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আইসিএসএফের ট্রাস্টি ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন বলেন, “প্রবাসীদের এই জেনোসাইডকে তাদের প্রজন্ম ও পরবর্তী প্রজন্মে নিয়ে যাওয়া এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। এটা না করতে পারলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ক্যাম্পেইন চালানোটা খুবই কঠিন কাজ হবে।

“বাংলাদেশিরা ছাড়া এর পক্ষে ক্যাম্পেইনার খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেজন্য সরকারকে এটি নিয়ে কাজ করতে হবে।”

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান, আইসিএসএফ এর ট্রাস্টি রায়হান রশিদ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে গণহত্যার তথ্যচিত্র প্রদর্শন করে আইসিএসএফ।

এর আগে ২৫ মার্চের প্রথম প্রহরে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে আইসিএসএফ ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজের উদ্যোগে ভার্চুয়াল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছিলেন ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা।