উত্তরণের নেতিবাচক প্রভাব পোশাক ও ওষুধে পড়ার আশঙ্কা সংসদীয় কমিটির

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটলে তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2021, 01:06 PM
Updated : 10 March 2021, 01:06 PM

বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ আশঙ্কা প্রকাশ করে এ বিষয়ে আগেভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ সম্প্রতি পেয়েছে, যার ফলে সম্ভাব্য সম্ভাবনার পাশাপাশি সমস্যা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বৈঠকের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে খুশি হচ্ছি। কিন্তু উত্তরণের ফলে যে প্রভাবগুলো পড়বে তা বিবেচনা করতে হবে। প্রভাবগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে।”

উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠলে এখন পাওয়া নানা বাণিজ্য সুবিধা হারানোর কথা বলেন সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী।

“বিশেষ করে আমাদের ওষুধ শিল্প ও গার্মেন্ট শিল্পের বিষয়টি দেখতে হবে। ওষুধ শিল্পের পেটেন্ট বাবদ টাকা প্রদান করতে গেলে ওষুধ সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাবে। দেখা যাবে প্যারাসিটামলের একপাতা (১০টি ট্যাবলেট) দুইশ টাকা হয়ে গেছে। এটা যাতে না বাড়ে তার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।”

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকে যেসব সুবিধা বাংলাদেশ পাচ্ছে, সেগুলো আরও ১০ বছর পাওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে সরকারকে তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন ফারুক খান।

“আমরা একটি চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে অস্ত্র বাদে সব ধরনের পণ্য বিনা শুল্কে রপ্তানি করতে পারি। এগুলো যাতে অব্যাহত থাকে, তার জন্য এখনই থেকেই আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।”

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বেশ কিছু সুবিধা বন্ধ হলেও এতে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম হবে বলে অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য।

উত্তরণের এই পর্যায়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ফারুক খান বলেন, “অতীতে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়া অনেক দেশ কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েছে। তারা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আবার এলডিসি হয়ে গেছে। এসব বিবেচনা করতে আমাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হবে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য একটি ‘কোর কমিটি’ গঠন করেছে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে।

সংসদীয় কমিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি রোধ এবং বিভিন্ন খাতে কর বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেছে বলে জানান ফারুক খান।

তিনি বলেন, “দুর্নীতি যেটা আছে তা বন্ধ করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশে গেলে সব সেক্টরে ট্যাক্স বাড়াতে হবে। কিন্তু আয় না বাড়লে ট্যাক্স বাড়ালে তো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। এগুলোর বিষয়ে ভাবতে হবে।”

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে যে সব সমস্যার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ, তা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠকে ব্রাজিলে রপ্তানি বাড়াতে আগামী এক বছরের মধ্যে সেখানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র মাধ্যমে ‘বাণিজ্য মেলা’ আয়োজনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে স্পেনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা, স্পেন-বাংলাদেশ পর্যটন উৎসাহিত করা এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের নতুন দুয়ার উন্মোচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, আব্দুল মজিদ খান, নাহিম রাজ্জাক ও কাজী নাবিল আহমেদ অংশ নেন।