ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের চিন্তাভাবনা নেই: আইনমন্ত্রী

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের কোনো পরিকল্পনা যে এখন সরকারের নেই, সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2021, 03:19 PM
Updated : 5 March 2021, 03:52 PM

তবে এ আইনের ‘অপব্যবহার বা দুর্ব্যবহার’ কীভাবে বন্ধ করা যায়, সরকার সেই চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।  

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা যাওয়ার পর ওই আইন বাতিলের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যেই আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্য এল।

এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার নিজের নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় গিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী। পরে কসবা উপজেলার পানিয়ারুপ গ্রামে নিজের বাড়িতে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “আইন সংশোধনের এখনও কোনো চিন্তা ভাবনা নাই। আমরা এই আইন সংশোধনের কোনো চিন্তাভাবনা করছি না। আমরা যেটা করছি, এটার অপব্যবহার এবং দুর্বব্যবহার বন্ধ করা চেষ্টা করছি।” 

এর আগে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে অপব্যবহার এবং দুর্ব্যবহার, অর্থাৎ মিসইউজ অ্যান্ড অ্যাবিউজ যেটা বলা হচ্ছে, সেই মিসইউজ অ্যান্ড অ্যাবিউজ যাতে এটা না করা যায়, সেরকম কী কী ব্যবস্থা করা যায়, সেটা এই ঘটনার আগেই আমি (জাতিসংঘের) অফিস অব দি হিউম্যান রাইটস কমিশনারের সাথে আলাপ আলোচনায় ছিলাম। এখন আবারও আলাপ আলোচনায় আমরা আছি।

“আগামী বৃহস্পতিবার সারা পৃথিবীর যে বেস্ট প্র্যাকটিস, এটা আমরা দেখব এবং আমরা একটা তুলনা করব। যদি মিসইউজ অ্যান্ড অ্যাবিউজ এটার বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা নেব।”

কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর জোরালো হয়ে উঠেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি। ফাইল ছবি

দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি ও উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা থেকেই যায়।

এখন অনেকে বলছেন, সেই আশঙ্কা যে সত্যি ছিল, কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুই ‘তার প্রমাণ’।

গত বছরের ৬ মে লেখক-অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাককে তার লালমাটিয়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে অভিযোগপত্র দেওয়া হলে সেখানেও তাকে আসামি করা হয়।

গত দশ মাসে কয়েকবার আবেদন করেও জামিন পাননি ৫৩ বছর বয়সী মুশতাক। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তার মৃত্যু হলে সারা দেশে শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। 

এই প্রেক্ষাপটে গত ১ মার্চ আইনমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, “এই আইনে কোনো অপরাধের অভিযোগ এলে পুলিশের তদন্তের আগে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বা তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া যাবে না- এমন একটি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অব্যাহত অপপ্রয়োগের যে অভিযোগ আসছে, সে বিষয়ে আইনমন্ত্রী বিবিসিকে বলেছিলেন, "সব আইনই যখন করা হয়, তখন কিন্তু একটা ট্রায়াল অ্যান্ড এরর বা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। কথা হচ্ছে, এখানে যদি কিছু অ্যাবিউজ এবং মিসইউজ হয়, সেটা কি করে বন্ধ করা হবে- সে ব্যাপারে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।"

এরপর অনেকেই মনে করেছিলেন, সরকার হয়ত আইন সংশোধনের কথা ভাবছে। শুক্রবার সকালে আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, “আপনারা কিছু দিনের মধ্যেই দেখবেন।”

তার ওই বক্তব্যকে ইতিবাচক অর্থে ধরে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ‘আইন সংশোধন হচ্ছে’ বলে খবরও প্রকাশ করে। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পর আইনমন্ত্রী নিজেই আইন সংশোধনের সম্ভাবনার কথা নাকচ করে দেন। 

মুশতাক আহমেদ

মুশতাকের মৃত্যুর প্রসঙ্গ ধরে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে আইনমন্ত্রী বলেন, “এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক, এটা দুঃখজনক। আমি তার পরিবারের কাছে সমবেদনা জানাই এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

“কিন্তু তিনি স্বাভাবিকভাবে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই স্বাভাবিক মৃত্যুবরণের সাথে এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কিন্তু কোনো কানেকশন নাই।”

আনিসুল হক বলেন, “দেখেন আজকে আমরা এই একটা নতুন জগতে পদার্পণ করেছি, সেটা কী? এই ডিজিটাল জগৎ। এই যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে যেইসব বিধান আছে, সেগুলি কিন্তু আমাদের দণ্ডবিধিতেও আছে। দণ্ডবিধিতে হচ্ছে ফিজিক্যালি করা, আর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে হচ্ছে ডিজিটালি করা।

“তাহলে এই অপারাধগুলো তে আছেই, এমন নতুন কোনো টেকনিক্যাল অপরাধ ছাড়া নতুন কোনো অপরাধ কিন্তু আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ভর্তি করি নাই। কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টটাকে যাতে কেউ অপব্যবহার বা দুর্ব্যবহার, মানে মিসইউজ অ্যান্ড অ্যাবিউজ না করতে পারে, সেইজন্য যেইসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এটার মধ্যে নেওয়া যায়, সেগুলোর চিন্তাভাবনা আমরা করছি।… আমরা এটার একটা ব্যবস্থা নেব।”

পুরনো খবর