উৎসব শেষে পিঠা শিল্পী ও বিক্রেতারাও জানালেন, মহামারীর মধ্যেও আশানুরূপ দর্শক-ক্রেতার সমাগম হয়েছে। বিক্রিতে সন্তুষ্ট তারাও।
সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া পিঠা উৎসব বৃহস্পতিবার শেষ হয়। উৎসবে প্রায় ৫০টি স্টল অংশ নেয় বলে শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ থেকে জানানো হয়।
“আজকে (সমাপনী দিনে) সর্বোচ্চ ৩০ জাতের পিঠা বানানো হয়েছে। নারিকেল পলি, জালপথি তিলের টপ, ঝিনুক পিঠা, চিংড়ি পিঠা, ইলিশ পিঠা, মালপোয়া, রস চিতই ভেজানো পিঠা, চুটকি পিঠা, দুধ পাকন ছাড়াও আরও বহু পিঠা করা হয়েছে।”
এবারের উৎসবে লোকসমাগম কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে পিঠা মেলা শীতের সময়ে করলে মানুষ বেশি হত। এখন বেশ গরম পড়েছে, যে আশা করেছিলাম এ মেলা নিয়ে তা হয়নি। তারপরও যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট।”
তাদের স্টলে বিভিন্ন জাতের পিঠার মধ্যে পাউরুটি ডেজার্ট বেশি বিক্রি হয়েছে। তারপর গাজীপুরের নকশী পিঠাও বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে।
আরজু গাজীপুর পিঠাঘর থেকে পিঠা খেয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদা আফরোজ তমা বলেন, “স্টল স্টল ঘুরে দেখে এখান থেকে তিন-চার ধরনের পিঠা নিয়েছি। তাদের পরিবেশটা ভালো লেগেছে, পিঠাও মজা হয়েছে।”
ফরিদপুর পিঠাবাড়ি স্টলের খালিদ বিন আমিন জানান, এবার উৎসবের ১০দিনের মধ্যে প্রতিদিন ১৬ ধরনের পিঠা প্রদর্শন ও বিক্রি করেছেন তারা।
তিনি বলেন, “এখান থেকে আমি কয়েকটি পিঠা আগে টেস্ট করেছি, আমার ভালো লেগেছে। এ জন্য ছেলে-মেয়েদের কথা ভেবে নিয়েছি।”
পিঠা উৎসবে আদিবাসীদেরও কয়েকটি স্টল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে খাগড়াছড়ি থেকে আসা ‘সিএইচটি এক্সপ্রেস’ নামের পিঠা ঘরে ছেসমাহ্ মুহ্, বেম্বু চিকেন, বিনি হোগা পিঠা, বিনি পুলিসহ ছয় ধরনের পিঠা বিক্রি করতে দেখা যায়।
এ স্টলের স্বত্ত্বাধিকারী দীপ্ত চাকমা বলেন, “আমরা যেসব আইটেম রেখেছি সেগুলোর সবগুলোই সুস্বাদু। আমাদের আদিবাসীরা ছাড়াও বাঙালীরাও এসব পিঠা খেতে পছন্দ করেনে। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ছেসমাহ মুহ পিঠা, কারণ কালো বিনি চাল ও নারিকেল দিয়ে তৈরি এ পিঠা খেতে খুব সুস্বাদু।”
উৎসবে বান্দবান নিংরং পিঠাঘরের মালিক চিং তু তু বলেন, “জানুয়ারিতে এ মেলার আয়োজন থাকলে মানুষের উপস্থিতি বেশি হত বলে মনে হয়। কারণ এ মেলাতে যেসব আইটেম করা সেগুলোর শীতেরই বেশি।”
সেরা পাঁচ পিঠাশিল্পী
জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব খন্দকার শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে নিজেদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং লোকায়ত শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলার লক্ষ্যেই ২০০৮ সাল থেকে এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এবার চতুর্দশবারের মত পিঠা উৎসবে প্রায় ২০০ ধরনের পিঠা প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
প্রদর্শনী চলার সময় নিরপেক্ষ বিচারকের মাধ্যমে উৎসবে অংশ নেওয়া স্টলগুলোর মধ্যে থেকে সমাপনী দিনে বিজয়ী পাঁচজনকে সেরা পিঠাশিল্পী ও তিনজনকে বিশেষ পিঠাশিল্পী হিসেবে সম্মাননা স্মারক ও অংশগ্রহণকারী অন্যদের সনদ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
এছাড়া পিঠাশিল্পী হিসেবে বিশেষ স্থান অর্জন করেছেন অজানা মাশরুম পিঠাঘরের জান্নাতুল ফেরদৌস, সাজিয়া ঢাকা পিঠাঘরের সাজিয়া রহমান ও রায়ন্ন বাজারের তামান্না আখি।