শহীদ মিনারে এইচ টি ইমামকে শেষ শ্রদ্ধা

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2021, 11:40 AM
Updated : 4 March 2021, 01:10 PM

বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে এইচ টি ইমামের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কফিনে প্রতি ফুল দেন।

এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস কমোডর এমএম নাঈম রহমান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।  

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে মারা যান এইচ টি ইমাম। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে হাসপাতালে ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা এইচ টি ইমাম ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিবও তিনি।

আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মুকুল বোস, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান ফুল দিয়ে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর এই সদস্যকে শেষ বিদায় জানান।

শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম; সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও।

যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এবং ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সংগঠন দুটির নেতা-কর্মীরাও এইচ টি ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।  

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক –কর্মকর্তারাও শ্রদ্ধা জানান।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “এইচ টি ইমাম মেধা ও শ্রম দিয়ে সরকারকে যেমন সমর্থন করেছেন, তেমনি করে তিনি দেশের অনেক কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রচার সেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি হাসপাতালে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন।

“চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু কাজ থেকে তিনি কখনো অবসর নেননি, এমন কর্মপাগল, কর্মনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন এইচ টি ইমাম। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা হবে, এটা সহজে পূরণ হওয়ার নয়৷।”

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “এইচটি ইমাম ছিলেন একজন অত্যন্ত দক্ষ, কর্মঠ, প্রাণবন্ত মানুষ। আমরা কখনো ভাবিনি তিনি হঠাৎ করে চলে যাবেন। এই করোনাকালেও তিনি ভালোভাবে কাজ-কর্ম চালিয়ে গেছেন। তিনি বয়সে বৃদ্ধ হলেও মনের দিক থেকে ছিলেন তরুণ । তার মত বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ খুব কমই আছে।”

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন, জাসদ, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন,বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ, আইন উপকমিটি, বাংলাদেশ গণসংগীত পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও ফুল শ্রদ্ধা জানানো হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এই প্রয়াত সদস্যের প্রতি।

এইচ টি ইমাম। ফাইল ছবি

হোসেন তৌফিক ইমামের জন্ম ১৯৩৯ সালে, পরে তিনি এইচ টি ইমাম নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন।

বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জেলায়। ম্যাট্রিক পাস করেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে পাস করেন ইন্টারমিডিয়েট।

রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি নিয়ে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি নেন। তখন তিনি বাম ছাত্র সংগঠনে যুক্ত ছিলেন।

পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে। এরপর পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারি চাকরিতে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিপরিষদের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি যোগাযোগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবও হন।

অবসর নেওয়ার পর আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন এইচ টি ইমাম। দলের নির্বাচন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন, যে কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন। প্রথমে তিনি জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনা বিষয়ে এইচ টি ইমামের রচিত কয়েকটি গ্রন্থকে বেশ গুরুত্ব দেন গ্রন্থ সমালোচকরা।

প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত এই উপদেষ্টার মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে নিয়ে যাওয়া হয় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় তার গ্রামের বাড়িতে। সেখানে বেলা ১১টায় আকবর আলী সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা হয়।

কফিন ঢাকায় ফিরিয়ে আনার পর দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ আছর গুলশানের আজাদ মসজিদে আরেক দফা জানাজা হয়। বিকালে ঢাকার বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর পর তাকে দাফন করা হয়।

 

পুরনো খবর