চলে গেলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী অভিনেত্রী লিলি চৌধুরী

শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী, প্রয়াত সাংবাদিক মিশুক মুনীরের মা নাট্যাভিনেত্রী লিলি চৌধুরী আর নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2021, 04:39 PM
Updated : 1 March 2021, 05:37 PM

তার ছোট ছেলে আসিফ মুনীর তন্ময় জানিয়েছেন, সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বনানীর বাসায় তার মায়ের মৃত্যু হয়।

বেতার, মঞ্চ ও টেলিভিশনের একসময়ের ব্যস্ত এই অভিনেত্রীর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

আসিফ মুনীর জানান, আত্মীয়-স্বজনদের দেখার জন্য তার মায়ের মরদেহ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বনানীর বাসায় রাখা হবে।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

জোহরের পর বনানী কবরস্থানে জানাজা শেষে ছেলের কবরের পাশে দাফন করা হবে লিলি চৌধুরীকে।

১৯২৮ সালের ৩১ অগাস্ট টাঙ্গাইলের জাঙ্গালিয়া গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন লিলি, পৈত্রিক পদবিতে তখন তার নাম রাখা হয় লিলি মির্জা।

বাবা নূর মোহাম্মদ মির্জার ছিল বদলির চাকরি। সেই সুবাদে তৃতীয় শ্রেণি থেকেই হোস্টেল জীবন শুরু হয়। কলকাতায় বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলে তাকে ভর্তি করে দেন তার বাবা।

লিলি যখন সপ্তম শ্রেণিতে, রবীন্দ্রনাথের নাটকে তার প্রথম অভিনয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেলে দিল্লিতে বাবা মায়ের কাছে চলে যান লিলি, ভর্তি হন ইন্দ্রপ্রস্থ গার্লস হাই স্কুলে। স্কুল বদলালেও অভিনয় ঠিকেই চলে।

দুই বছর পর আবার কলকাতায় ফিরে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল থেকেই প্রবেশিকা শেষ করেন লিলি। এরপর লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পড়ার সময় দুই বছর হোস্টেল জীবনেও কলেজের নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতে থাকেন। 

পরিবারের সঙ্গে লিলি চৌধুরী। ছেলে আসিফ মুনীর তন্ময়ের ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি

এর মধ্যেই আসে দেশভাগের সেই অস্থির সময়, কলকাতাজুড়ে দাঙ্গা। ১৯৪৮ এ নূর মোহাম্মদ মির্জা ঢাকায় চলে আসেন। আর লিলি মির্জার পরিচয় হয় মুনীর চৌধুরীর সঙ্গে।

লিলি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বাম রাজনীতিতে জড়িত মুনীর ১৯৪৯ সালের মার্চে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। পাঁচ মাস পর মুনীর মুক্তি পেলে তারা বিয়ে করে ফেলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় ১৯৫২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আবার গ্রেপ্তার হন মুনীর চৌধুরী। সেবার মুক্তি মেলে দুই বছর পর। এর মধ্যেই কারাগারে রচিত হয় ‘কবর’ নাটকটি।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ হাজারো বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। ১৪ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী এসে ধরে নিয়ে যায় মুনীর চৌধুরীকে। স্বামীর সঙ্গে সেই লিলির শেষ দেখা।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা লিলিকে সদ্য স্বাধীন দেশে কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। চাকরির পাশাপাশি অভিনয় করে যান বেতার, মঞ্চ আর টেলিভিশনে।

মুনীর চৌধুরীর শুরু করা টেনেসি উইলিয়ামসের ‘স্ট্রিট কার নেমড ডিজায়ার’ নাটকের অসমাপ্ত অনুবাদের কাজ লিলিই শেষ করেন।

স্বামীর সঙ্গে তার পত্রালাপ আর দুজনের লেখা ডায়েরির সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে ‘দিনপঞ্জি-মনপঞ্জি-ডাকঘর’ শিরোনামে। 

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নাট্যকার-নাট্যশিল্পী সংসদ, টেলিভিশন নাট্যশিল্পী নাট্যকার সংসদ ও বাংলাদেশ মানবাধিকার নাট্য পরিষদের সম্মাননা পেয়েছেন লিলি চৌধুরী।