পৌর নির্বাচন: পঞ্চম ধাপে কমেছে ভোটের হার

এবার পৌরসভা নির্বাচনের পাঁচ ধাপে মেয়র পদে গড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2021, 01:10 PM
Updated : 1 March 2021, 01:12 PM

ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পযন্ত পাঁচ ধাপে এ নির্বাচন হয়।

২৩০ পৌরসভার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয় পেয়েছে ১৮৫ পৌরসভায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছে ৩২ পৌরসভায়। বিএনপির ধানের শীষের ১১ জন প্রার্থী, জাতীয় পার্টির একজন ও জাসদের একজন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে।

ইভিএম ও ব্যালট পেপারে ভোট হয় এবার। গোলযোগ-সহিংসতা ও ভোট কেন্দ্র দখলের অভিযোগের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবরই দাবি করে এসেছে, সুষ্ঠু ও ভালো ভোট হয়েছে।

২৮ ডিসেম্বরের প্রথম ধাপে ভোট পড়েছিল ৬৫.২৫%; ১৬ জানুয়ারির দ্বিতীয় ধাপে পড়ে ৬৩.৬৭%; ৩০ জানুয়ারির তৃতীয় ধাপে ৭০.৪২%; ১৪ ফেব্রুয়ারির চতুর্থ ধাপে ৬৫.৩৩% এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির পঞ্চম ধাপে ৫৮.৬৭ ভোট পড়েছে।

সেই হিসাবে পঞ্চম ধাপে এসে ভোটের হার কমে ৬০ শতাংশের নিচে নেমেছে।

১১ এপ্রিল ষষ্ঠ ধাপে ৯ পৌরসভার ভোট রয়েছে।

পাঁচ বছর আগে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে একদিনে পৌরসভায় যে ভোট হয়  তাতে দলীয় প্রতীকে মেয়র পদের নির্বাচনে ৭৩.৯২% ভোট পড়েছিল। ২০১১ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশনের অধীনে গড়ে প্রায় ৭৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির অধীনে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হওয়া নিয়ে বরাবরই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

এবারের পৌরসভা নির্বাচনে গোলযোগ ও সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার  সমালোচনা করেছেন।  

তবে গড় উপস্থিতি বাড়ায় সন্তুষ্টিও ছিল।

পঞ্চম ধাপে ৫৯%

রোববার পঞ্চম ধাপে ৫৯টি পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে। এতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ২৮ জন, বিএনপির একজন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ২ জন জয়ী হন।

ইসি সচিবালয়ের উপ সচিব মিজানুর রহমান জানান, এ নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট পড়েছে ৫৮.৬৭%। এ ধাপে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮২০ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৮ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৩ জন।

এ ধাপে ইভিএমে সর্বোচ্চ ভোট পড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ৮১.৫৪% ও সর্বনিম্ন ভোট পড়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ৪৩.৭৬%।

আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়

ইসি কর্মকর্তারা জানান, তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে পাঁচ ধাপে ২৩০টির বেশি পৌরসভার ভোট হয়েছে।

সংঘাতের এই চিত্র পটিয়া পৌরসভার

দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ায় অন্তত এক ডজন দলের প্রার্থী মেয়র পদে লড়েছে। মূল লড়াই হয়েছে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যে। এ দুটি দলের মনোনয়ন বঞ্চিতদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল।

২৩০ পৌরসভার চূড়ান্ত ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, নৌকা প্রতীকের ১৮৫ জন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩২ জন, বিএনপির ১১ জন, জাতীয় পার্টির একজন ও জাসদের একজন প্রার্থী জয় পেয়েছে।

প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে ১৯ জন, বিএনপির ধানের শীষের দুই জন এবং তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হয়।

দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৬ জন, বিএনপির চারজন, জাতীয় পার্টির একজন, জাসদের একজন ও আটজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হয়।

তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৬ জন, বিএনপির তিনজন ও স্বতন্ত্র ১৪ জন বিজয়ী হয়।

চতুর্থ ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৬ জন, বিএনপির ১ জন ও ৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়।

সবশেষ পঞ্চম ধাপে আওয়ামী লীগের ২৮ জন, বিএনপির ১ জন ও স্বতন্ত্র ২ জন জয় পায়।

এবার পৌর নির্বাচন নিয়ে  নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, এখন নির্বাচনগুলো ‘এককেন্দ্রিক’ হয়ে যাচ্ছে। এককেন্দ্রিক নির্বাচন বহুদলীয় গণতন্ত্রের উপাদান হতে পারে না।

ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার পৌর নির্বাচন উৎসবমুখর হয়েছে বলে দাবি করছেন।

পৌরসভা নির্বাচনেও ইসি সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তার দল আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে না।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইসি সচিব বলেন, “নির্বাচন কমিশন সব সময় চায়, প্রতিটি ব্যক্তি, প্রতিটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আমাদের কাছে যে সহযোগিতা চাইবেন, নির্বাচন কমিশন সে বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করবে।”

মার্চের প্রথম সপ্তাহে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে।

পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে মনোনয়নে ভোটে আওয়ামী লীগ পায় ১৭৭টি, আর বিএনপির প্রার্থীরা ২২টিতে জয় পায়।

২০১১ সালে ভোটে ৯৬টি পৌরসভায় জয় পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা। সে সময় বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থীরা জয় পায় ৯৪টিতে।