ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লুটেরাদের রক্ষায়: আনু মুহাম্মদ

লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2021, 03:36 PM
Updated : 28 Feb 2021, 07:22 PM

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যু এবং তারপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রোববার ঢাকার শাহবাগে এক সমাবেশে এই অভিযোগ করেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “লুটেরা-দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করার জন্য সরকার নানাবিধ আইনি এবং বে-আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে৷

“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন না থাকলে এ সরকার নিপীড়কদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে৷ তাদের নিরাপত্তার জন্যই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।”

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “আজকে অনেক লোক রাষ্ট্র ক্ষমতার জোরে ব্যাংক লুটপাট, দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে লিখলে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে লেখকদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।”

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “এই ডিজিটাল আইনের দুটি দুর্বলতা আছে, প্রথম দূর্বলতা হচ্ছে এর বেশিরভাগ ধারাই হল জামিনের অযোগ্য। বলা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ চেতনার অপমান, বঙ্গবন্ধুর অপমান, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলে এই অপরাধগুলো জামিনের অযোগ্য। কিন্তু এটি করে কি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকল? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তো আপনারাই নষ্ট করেছেন। আপনারাই ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করেছেন। এটা তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়।

“এমনভাবে আপনি আইনটি প্রয়োগ করলেন, যাতে ১৩টি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সমালোচনা করলেন। ডিজিটাল আইনের ধারাগুলো বিশেষ করে জামিনের অযোগ্য ধারাগুলো পর্যালোচনা করা উচিৎ।"
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দি খুলনার শ্রমিক নেতা রুহুল আমিনসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতাসহ সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের দাবিও জানানো হয়।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “আসল কথা হল, সরকারই নিপীড়ক-দুর্বৃত্তদের রক্ষক। সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিলে তাদের অসুবিধা৷ এসব অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠিত হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই৷ এদেশে আন্দোলন ছাড়া কোনো কিছু হয় না।”

অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “১০ মাস বন্দি রেখে, জামিন না দিয়ে কারাগারে কারও মৃত্যু হলে আমরা বলতে পারি না তার হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে।

“সাত দিন আগেও মুশতাক সুস্থ ছিল বলে তার স্ত্রী জানিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ তার হৃদরোগে মৃত্যু হল? এটা হৃদরোগে মৃত্যু, নাকি অন্য কারণে তা তদন্ত করে বের করা আবশ্যক।”

‘বাক স্বাধীনতার দাবিতে বাংলাদেশ' ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে ‘খুনির ভাইয়েরা মুক্তি পায়, নির্দোষ লেখক কবর যায়' প্ল্যাকার্ড হাতে যোগ দেন অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে যদি একজন লেখক তার লেখালেখির জন্য প্রাণ হারাতে হয়, ১০ মাস জেলে পচে মরতে হয়, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা কোথায়? কোথায় আজ আমাদেন ভুরি ভুরি লেখকরা? লেখক হিসেবে আপনাদের বিন্দুমাত্র আত্মসম্মান থাকলে আজ ঘরে বসে থাকতে পারেন না।”

রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য হাসনাত কাইয়ুম, চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মহিউদ্দিন সমাবেশে বক্তব্য দেন।