আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ‍পুলিশ ‘হত্যাচেষ্টার’ মামলা

কারাগারে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শাহবাগে মশাল মিছিলকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় আটক সাতজনের বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের ‘হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2021, 08:55 AM
Updated : 27 Feb 2021, 10:06 AM

শুক্রবার মধ্যরাতে শাহবাগ থানায় দায়ের করা এই মামলায় সাতজনকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে ওই থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাহবুব আলম জানিয়েছেন।

ছয় মাসের বেশি সময় আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি অবস্থায় বুধবার মুশতাক আহমেদ মারা যান। এর প্রতিবাদে শুক্রবার দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা সন্ধ্যায় টিএসসি থেকে মশাল মিছিল নিয়ে শাহবাগে এলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়।

এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় তাদের ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের অভিযোগ, রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্ট বন্ধ করে পুলিশ লাঠিপেটা করে।

কারাবন্দি অবস্থায় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো শুক্রবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।

অপরদিকে আন্দোলনকারীদের ‘হামলায়’ ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়।

সংঘর্ষের বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “সন্ধ্যার দিকে একদল টিএসসি থেকে মশাল মিছিল নিয়ে জাদুঘরের সামনে আসলে আমরা তাদেরকে ইউ টার্ন নিতে বলি। পরে তারা মশালের লাঠি দিয়ে পুলিশের উপর হামলা করে। তখন পুলিশ আত্মরক্ষার্থে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এদের একটা গ্রুপ বামপাশ দিয়ে চলে যায়, আরেকটা গ্রুপ পিছনে ফিরে পুলিশের উপর অসংখ্য ইটপাটকেল ছুড়ে। এতে আমাদের ১২-১৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। আমার নিজেরও পায়ে আঘাত লেগে ব্লিডিং হয়েছে।”

আহত বিক্ষোভকারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা জানি না তারা কীভাবে আহত হয়েছে। কিন্তু তারা যেভাবে ইটপাটকেল মেরেছে, তাদের ইটপাটকেলেই তারা আহত হয়ে থাকতে পারে। পুলিশ শুধু তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। তারা যখন ইটপাটকেল মারছে, তখন পুলিশ ৪-৫টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।”

তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ওই ঘটনার আলোকচিত্রে পুলিশ সদস্যদের লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে।

কারাবন্দি অবস্থায় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মশাল মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা।

মামলার বরাত দিয়ে শাহবাগ থানার পরিদর্শক মাহবুব শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনুমতি ছাড়া এক থেকে দেড়শ জন মশাল নিয়ে বিক্ষোভ করার সময় তাদের

আশপাশের হাসপাতালগুলোর কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা না শুনে পুলিশের উপর উল্টো হামলা চালায়।

“তাদের মশালের আগুনে একজন কনস্টেবলের শরীরে আগুন ধরে যায়। পরে মশালের লাঠি দিয়ে পুলিশকে মারধরও করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের অন্তত ১৫ জন সদস্য আহত হয়।”

পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হয় জানিয়ে এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনার সময় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয।

গ্রেপ্তাররা হলেন- আমজিন হায়দায় (২২), নজিব আমিন চৌধুরী (২৭), তানজিমুর রহমান (২২), আকিব আহমেদ (২২), আরাফাত (২৬), নাজিদা জান্নাত (২৪) ও জয়তী চক্রবর্তী (২৩)।

পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব বলেন, আহত পুলিশ সদস্যদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগে মশাল মিছিলকারী বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের ‘হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

“আর গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশকে হত্যার চেষ্টা, রক্তাক্ত জখম করা এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।”

এই ঘটনায় আর কারা জড়িত, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শনিবারও শাহবাগে অবরোধ

কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যু, পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে শনিবারও শাহবাগে বিক্ষোভ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

মিছিল নিয়ে এসে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে আধা ঘণ্টার মতো শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন তারা। এ সময় ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়।

বেলা ১টা ৫ মিনিট দিকে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টিএসসি অভিমুখে যাত্রা করেন তারা।

আগামী ১ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক আল কাদেরী জয়। নেতাকর্মীদের উপর পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদ জানান তিনি।

আল কাদরী জয় বলেন, “পুলিশের হামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে সরকার এদেশের জনগণের মুখ বন্ধ করবে ভেবেছেন- শেখ হাসিনা, আপনি বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। আপনি এ দেশের ইতিহাস ভুলে গেছেন। আপনি জানেন না কীভাবে আইয়ুব খানকে এদেশের ছাত্র-জনতা ক্ষমতা থেকে নামিয়েছিল?

“আপনি দেখেন নাই কীভাবে ছাত্র সমাজ স্বৈরাচারী এরশাদকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছে? সেই ছাত্রসমাজ ২০২১ সালে এসে আপনাকে, আপনার সরকারকে স্বৈরাচার বলছে।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা লেখক মুশতাকের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সাথে সাথে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- যার মাধ্যমে লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে তার বিলুপ্তি দাবি করছি, এই আইন বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।”

দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।