শুক্রবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘জান ও জবানের স্বাধীনতা চাই’ ব্যানারে এই সমাবেশ হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়ে মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং এই আইনে গ্রেপ্তারদের মুক্তি দাবি করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “সরকার সমালোচনায় ভয় পায়। সরকার ভয় পায় যদি নাগরিকদের কথা বের হতে থাকে তাহলে ক্ষমতায় থেকে গুণ্ডাদের নিয়ে লুণ্ঠন করা আর সম্ভব হবে না। এই ভয়ে সরকার সব ধরনের কথা বলার অধিকারকে হরণ করতে চায়। মুশতাকের মতো মানুষদের আটকে রেখে, পিটিয়ে হত্যা করে সরকার এবং আদালত একাকার হয়ে গেছে।”
কী কারণে মুশতাকের জামিন ছয় দফা প্রত্যাখ্যান হয়েছে- সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “খুনের আসামি জামিন পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কথা বলার জন্য একজনকে আটক করা হলে তাকে জামিন দেওয়া হয় না।
ভয়কে জয় করে অনিয়ম-অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান বলেন, “সম্প্রতি আল-জাজিরার একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ হওয়ার পর আমরা দেখেছি, কিছু মানুষ নিজেদের ‘প্রধানমন্ত্রীর লোক’ দাবি করছেন। যখন কেউ প্রধানমন্ত্রীর লোক হয়ে যায় তখন সে আর মানুষ থাকে না।”
যারা চিন্তা করতে পারে, তারাই এখন ‘সরকারের প্রতিপক্ষ’ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, “অন্যায় হচ্ছে জেনেও আপনারা যারা এখনও নীরব রয়েছেন, সুবিধা পাওয়ার জন্য চুপ আছেন তাদের বলতে চাই, মীর জাফরের মতো আপনাদেরও আমরা মনে রাখব। এই সরকার একদিন ধসে পড়বে। তখন আপনাদের দিকে তাকানোর মতো কেউ থাকবে না। মুশতাক কিংবা আবরার ফাহাদ আমাদের কথা বলেছেন বলেই তাদের মরতে হয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই তাদের জন্য দাঁড়াইনি। এই কাজটা আমাদের করতে হবে।”
সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, “সরকার আমাদের পোকামাকড় মনে করে। খেয়াল করলেই দেখবেন, ১৪ বছরের বালকও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের আসামি হয়েছে। নারী, বৃদ্ধ এমনকি যারা রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন বলে পণ করেছেন, তাদেরও এই আইনের দ্বারা নিপীড়ন করা হয়েছে।
“অবিলম্বে এই নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করুন এবং এই আইনে গ্রেপ্তারদের মুক্তি দিন। জনগণ যদি কথা বলতে শুরু করে, আপনাদের মোমের মিনার গলে যাবে। শোষকরা এসেছে বার বার। চলেও গেছে। কিন্তু জনগণ থেকে যাবে।”
অন্যদের মধ্যে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতা ফয়জুল হাকিম, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, অনুবাদক ও লেখক গৌরাঙ্গ হালদার, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য হাসনাত কাইয়ুম, মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।