বিমানের ১৭ সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে তদন্তের নথি দেখবে হাই কোর্ট

ছয় বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের নোটিসে সাড়া না দেওয়া বিমান বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সের ১৭ সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে তদন্তের নথি চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2021, 10:29 AM
Updated : 25 Feb 2021, 12:12 PM

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দুদককে তা দাখিল করতে বলে ৯ মার্চ এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখেছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।

ওই ১৭ সিবিএ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদকের প্রতিবেদন দেখে হাই কোর্ট বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফৌজিয়া আখতার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিনউদ্দিন মানিক।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্দেশ অনুযায়ী দুদক আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে সিবিএ নেতারা দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সে অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে কোনো তথ্য প্রতিবেদনে নেই।

“সে কারণে সংশ্লিষ্ট তদন্তের নথি আদালতে দাখিলের আরজি জানালে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ১৭ সিবিএ নেতার বক্তব্য ও কমিশনের সিদ্ধান্তসহ পূর্ণাঙ্গ নথি দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।”      

বিমানের ওই ১৭ সিবিএ নেতার বিষয়ে দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিল কিনা, তা গত ২৮ জানুয়ারি জানতে চায় হাই কোর্ট।

ওই ১৭ জন হলেন- বিমানের তখনকার সিবিএ সভাপতি মো. মসিকুর রহমান, সহ-সভাপতি আজাহারুল ইমাম মজুমদার, আনোয়ার হোসেন, মো. ইউনুস খান, সাধারণ সম্পাদক মো. মনতাসার রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুল আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম, অর্থ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান, অফিস সম্পাদক মো. হারুনর রশিদ, প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল বারি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. ফিরোজুল ইসলাম, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান, নারী বিষয়ক সম্পাদক আসমা খানম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গোলাম কায়সার আহেমেদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আবদুল জব্বার ও মো. আবদুল আজিজ।

নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুদক প্রতিবেদন দিলে তার ওপর শুনানি করে আদালত নথি তলব করে। 

দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে ২০১৪ সালে এই ১৭ সিবিএ নেতাকে নোটিস দিয়েছিল দুদক। কিন্তু দুদকের তলবে হাজির না হয়ে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

নোটিস পাওয়া নেতারা বলেছিলেন, তারা দুদকের যে কোনো পদক্ষেপ আইনগতভাবে মোকাবেলা করবেন।

সেইসব সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করে ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আদালত রুল জারি করে।

বিমানের ১৭ সিবিএ নেতাকে হাজির করার ক্ষেত্রে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

বেসামরিক বিমান সচিব, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিমানের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

গত ২৮ জানুয়ারি সে রুলটি শুনানির জন্য ওঠে। শুনানির পর আদালত ওই ১৭ সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে দুদকের পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চায়।

রিটকারী আইনজীবীর ভাষ্য, দুদক আইনের ১৯(১)(ক) ধারায় দুর্নীতির তদন্ত, অনুসন্ধান, সমন জারি এবং তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিতে পারে। এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ মানা বাধ্যতামূলক। কেউ তা অমান্য করলে তিন বছরের শাস্তিও হতে পারে।

বিমানের সিবিএ নেতারা দুদকের নির্দেশনা অমান্য করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, তাতে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে বলে রিটকারীপক্ষের অভিযোগ।