পিলখানা হত্যাকাণ্ড: চূড়ান্ত বিচারের অপেক্ষায় স্বজনহারা পরিবার

এক যুগ আগে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ সাকিব রহমানের মাথার ওপর থেকে নির্ভরতার ছায়াটুকু সরে যায়। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সময় জওয়ানদের চরম নির্মমতায় হারিয়ে যান তার বাবা সেনা কর্মকর্তা কর্নেল কুদরাত এলাহী রহমান শফিক।

কামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2021, 09:34 AM
Updated : 25 Feb 2021, 09:44 AM

লম্বা এই সময়ে অনেক চড়াই-উৎরাই দেখেছেন সাকিব। তবে যত দিন যাচ্ছে, ততই হতাশ হয়ে পড়ছেন এই হত্যা মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতায়।

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিডিআরে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সে বিদ্রোহে সে বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে মারা যান ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। কর্নেল কুদরাত এলাহী রহমান শফিক তাদের মধ্যে ছিলেন।

বৃহস্পতিবার বনানী সামরিক কবরস্থানে সেই ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সাকিব রহমান।

১২ বছর আগে পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের সময় সাকিবের বয়স ছিল ১৮; ঘটনার সময় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাভার ক্যাম্পাসে ছিলেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পিলখানায় গোলাগুলির খবর যখন পেয়েছি, ভেবেছি হস্টেজ সিচুয়েশন জাতীয় কিছু। কোনো ডিমান্ড ফুলফিল হওয়ার পরে ছেড়ে দেওয়া হবে। বুঝতে পারিনি এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হবে।

“২৫ ও ২৬ তারিখ জানতে পারিনি বাবার পরিণতি। ২৭ ফেব্রুয়ারি সিএমএইচে মৃতদেহ দেখে নিশ্চিত হই বাবা আর নেই।”

কর্নেল কুদরাত এলাহী রহমান শফিকের বাবা হাবিবুর রহমান

সাকিব জানান, তার মা লবি রহমান টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠান করেন।

“টেলিভিশনে হাসিখুশি দেখা গেলেও বাসায় মায়ের কষ্ট আমি দেখছি।”

পিলখানা হত্যা মামলায় হাই কোর্টের রায়ের পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য সর্বোচ্চ আদালতে এ বছরের মধ্যে আপিল শুনানি শুরু করা নিয়ে সংশয় রয়েছে আইনজীবীদের।

সাকিব বলেন, “রায় এখনও কার্যকর হচ্ছে না, অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে। আমার দাবি, একটি জুডিশিয়াল এনকয়ারি কমিশন গঠন করা হোক।  তাহলে ষড়যন্ত্রকারী কারা এবং পর্দার আড়ালে কারা ছিল, সেসব বের হয়ে আসবে।

“কোর্টের কাজ হচ্ছে খুবই স্বাভাবিক। কোর্ট কি দেখবে খুন হয়েছে কি হয়নি। কিন্তু এর পেছনে কী মোটিভ ছিল, সে জিনিসগুলো তদন্ত ছাড়া বের হয়ে আসবে না।”

কর্নেল কুদরাতের ৮৩ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবা হাবিবুর রহমানও বনানী কবরস্থানে এসেছিলেন। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় অনেকটাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

হাবিবুর রহমান বলেন, “২৫ বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। ছেলে মারা গেল ২০০৯ সালে। পুরো ১২ বছর চলে গেল- লোকে জিজ্ঞেস করে- কী হয়েছে? বিচার পেয়েছ?”

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, “মানুষের বিচার পাইনি। ১২ বছর হয়ে গেল; এখন আল্লার বিচারের অপেক্ষা করছি। বিচার যদি করতে হয় আল্লাহই করবেন। কারণ আমার সন্তান আমার জানা মতে সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিরাপরাধ।”

মৃত্যুর দেড়মাস আগে কুদরাত দিনাজপুরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন জানিয়ে তার বাবা বলেন, “কেন মারা হল আমার সন্তানকে, তা আমাদের জানা নেই। আমরা কল্পনাও করতে পারি না এভাবে মারা যাবে কুদরাত।”

সাকিবের পরিবারের মত আরও অনেক স্বজন হারানো মানুষ সকাল কবরস্থানে এসেছিলেন। দোয়া পড়ে, কোরআন তেলাওয়াত করে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন তারা।