স্বরাষ্ট্র সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার (লিগ্যাল এইড) চেয়ারম্যান, পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, রংপুর, খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার, সুপারসহ ১৪ বিবাদীকে সাত দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ এ রুল জারি করে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল হালিম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইশরাত হাসান ও শায়লা জাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
আইনজীবী আব্দুল হালিম বলেন, “রিট আবেদনে ধর্ষণের শিকার তিন শিশু ভিকটিমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে গত চার বছর ধরে বিচার ঝুলে আছে একটি মামলা। এই শিশুটি আদৌ বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বাকি দুটি ঘটনার মধ্যে একটি ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও আছে।”
তিনি বলেন, ধর্ষণের মামলা দায়ের, তদন্ত ও বিচার করেই দায় শেষ হয়ে যায় না। রাষ্ট্রের আরও দায় আছে। শিকার নারী-শিশুদের পুনর্বাসন, তাদের শারীরিক, মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, বিচারের ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং পুনর্বাসন করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
‘নারী-শিশু নির্যাতন আইনে দায়ের করা ৯৭ শতাংশ মামলায় সাজা হয় না’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ২ জানুয়ারি এই রিট আবেদনটি করা হয়।
শিশু ও মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের পক্ষে রিট আবেদনটি করা হয়।
আর কোনো দেশে ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুদের ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন করেছে বা করছে, এমন উদাহরণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এক নারী ভারতের হাওড়ার রেলওয়ে স্টেশনে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। পরে চন্দ্রিমা দাস নামে একজন আইনজীবী কোলকাতা হাই কোর্টের এক আইনজীবী ২০০০ সালে ক্ষতিপূরণের মামলা করেছিলেন।
ওই বছরেরই কোলকাতা হাই কোর্ট ওই নারীকে ১০ লাখ ভারতীয় রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আপিল খারিজ করে দিয়েছিল।
ওই রায়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বলে দিয়েছে, ধর্ষণ হল মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সবচেয়ে গুরুতর একটি অপরাধ। মানবাধিকার, মৌলিক অধিকারের ক্ষতিপূরণ অন্যান্য সব ক্ষতিপূরণের চাইতে আলাদা। এর সাথে ধর্ষণের বিচারের কোনো সম্পর্ক নাই।
পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের স্কিম চালুর উদাহরণ তুলে ধরে রিট আবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮ সালে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছে, যেখানে ধর্ষণের শিকার নারী শিশুদের ১৩টি ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে।
গণধর্ষণ ও ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে তার জন্য ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। ধর্ষণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা। যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা।
রিট আবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের কারণে যেহেতু একজন নারী বা শিশুর সংবিধান স্বীকৃত জীবনের অধিকার ও আত্মমর্যদার অধিকার লঙ্ঘিত হয় সুতরাং রাষ্ট্র তাকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করতে বাধ্য।