এসব কলেজে চলমান পরীক্ষাসহ প্রায় তিন মাসের মধ্যে নির্ধারিত সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও অধ্যক্ষদের এক সভা থেকে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসার পর সন্ধ্যায় নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে বুধবার সকাল ৯ টায় ফের এই মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে ফিরে গেছেন তারা।
এর আগে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা নাগাদ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। সন্ধ্যায় জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে ‘পরীক্ষা নিয়ে টালবাহানা, চলবে না, চলবে না’, ‘চলমান পরীক্ষা নিতে হবে নিতে হবে’, ‘সাত কলেজের পরীক্ষা নিতে হবে নিয়ে নাও’, ‘ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা নিতে হবে নিতে হবে’, ‘দাবি মোদের একটাই-মার্চে হল-ক্যাম্পাস খোলা চাই’, ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
“আমাদের অনেকেরেই পরীক্ষা চলমান। এই অবস্থায় হঠাৎ পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা পরীক্ষা দিতে চাই। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।”
ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রী বলেন, “২০১৯ সালের পরীক্ষা এখনও রয়ে গেছে। আমরা এভাবে আর সেশনজটে আটকে থাকতে চাই না। আমরা পরীক্ষা দিতে চাই। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলবে। বুধবার সকাল ৯টায় আমরা আবারও নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান করব।”
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু হলেও আবাসন সঙ্কটে থাকা শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল।
রোববার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের তালা ভেঙে ভেতরে অবস্থান নিলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তার আঁচ লাগে। সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও অমর একুশে হলের প্রধান ফটকের শিকল খুলে ভেতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
এরপর শিক্ষার্থীরা ১ মার্চের মধ্যে হল খোলার সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়।
সোমবারই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, ঈদুল ফিতরের পর ২৪ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। এর আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হবে।২৪ মে পর্যন্ত কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধরনের পরীক্ষা নিতে পারবে না। ২৪ মের পরে পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। আর অনলাইনে যেভাবে ক্লাস চলছে, ওই সময় পর্যন্ত সেভাবেই চলবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো আগামী ১৭ মে থেকে খুলে দেওয়া হবে।
তার এই ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্বের পরীক্ষার্থীদের জন্য ১৩ মার্চ থেকে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। একইসঙ্গে পরীক্ষার রুটিনও বাতিল করা হয়। হল খোলার পর শিক্ষার্থীদের দুই সপ্তাহের প্রস্তুতির সময় দিয়ে পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন।
পরে বিকালে সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সভায় সব পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অধিভুক্ত সাত কলেজের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২৪ মে থেকে ক্রম অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। এর আগে যেসব পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়েছিল, সেসব পরীক্ষাও ২৪ মে পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।”
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমিয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে ২০১৭ সালের ফেব্রুযারিতে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।