পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের জামিন বাতিল হবে না কেন: হাই কোর্ট

অর্থ ও মানবপাচারের মামলায় কুয়েতে দণ্ডিত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের জামিন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2021, 09:12 AM
Updated : 15 Feb 2021, 09:12 AM

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে সাড়া দিয়ে সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আগামী ১০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে দুদকের আবেদনে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত আমাদের আবেদনের শুনানি নিয়ে তাদের জামিন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে।”

বৃহস্পতিবার পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের জামিন আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তার নথি জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এর জন্য দুই মাস সময় দেওয়া হয়।

দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার বিরুদ্ধে গত বছর ১১ নভেম্বর মামলা করে দুদক।

এ মামলায় গত বছর ২৬ নভেম্বর দাখিল করা জামিন আবেদনের সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান স্বাক্ষরিত একটি নথি দাখিল করা হয়। সেখানে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি শাখায় হিসাবে অর্থ পাচার সংঘটিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি। নথিটি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে পাওয়া বলে জামিন আবেদনে বলা হয়।

পরে ১০ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত জামিন আবেদন খারিজ করে তাদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী আত্মসমর্পণের পর গত বছর ২৭ ডিসেম্বর তাদের জামিন দেন ঢাকার বিশেষ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ।

ওই জামিন আদেশ বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করে দুদক। সেই আবেদনের শুনানির করে মঙ্গলবার রুল দিল হাই কোর্ট।

এদিকে গত বছর ২২ ডিসেম্বর ‘অর্থ পাচারের সংঘটিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি’র সংশ্লিষ্ট নথিতে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞাকে তলব করে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।

রুলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তার স্ববিরোধী বক্তব্য (‘ঋণ হিসাব থেকে কোন কোন খাতে অর্থ স্থান্তর করা হয়েছে, অথবা মানি লন্ডারিং হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করা যায়নি।’ আর গত বছর ৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘আলোচ্য ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং সংগঠিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি। অতএব, উক্ত অভিযোগটি এই বিভাগের তরফ থেকে নথিভুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে’।)  কেন অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।

নথিটি এনআরবি ব্যাংক সরবরাহ করেছে বলে পাপুলের স্ত্রী-কন্যার আইনজীবী দাবি করলেও ১২ জানুয়ারি এনআরবি ব্যাংক জানায়, তারা এ ধরনের নথি দেয়নি। এরপর আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত সব নথি তলব করে। আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক নথি দাখিল করে।

নথি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মোহাম্মদ শামীম আজিজ আদালতে বলেন, জামিন আবেদনে দেওয়া নথির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নথির মিল নেই। জামিন আবেদনে যা দাখিল করা হয়েছে তা জালিয়াতি হয়েছে। এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তার তদন্ত হওয়া দরকার।

শুনানিতে জামিন আবেদনকারীর আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজাও বলেন, ওই নথি যদি জালিয়াতি হয়ে থাকে তবে এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত হওয়া দরকার।

শুনানি শেষে আদালত গত বৃহস্পতিবার রায় দেয়। রায়ে রুলটি যথাযথ ঘোষণা করা হয়। 

গত বছর ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) শহিদ ইসলাম পাপুলকে কুয়েতে গ্রেপ্তার করে। কুয়েত সিআইডি তার বিরুদ্ধে সেখানে মানবপাচার ও অর্থপাচারের মামলা করে। সে মামলায় চার বছরের সাজা হয়েছে পাপুলের।

আরও পড়ুন