মহামারীতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার নিয়ে ভিন্নমত মাউশির

করোনাভাইরাস মহামারীতে বছরজুড়ে ছুটি আর অর্থনৈতিক সঙ্কট শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক বাড়াবে বলে নানা জরিপে উঠে এলেও তাতে ভিন্নমত জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2021, 04:13 PM
Updated : 10 Feb 2021, 04:29 PM

বুধবার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব জরিপের কোনো ‘ভিত্তি নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি; যে অনুষ্ঠানে এবার ঝরে পড়ার হার ২০-৩৩ শতাংশ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

গত কয়েক বছরে ঝরে পড়া কমে আসার পরও সরকারি হিসাবে গত বছর প্রাথমিক পর্যায়ে ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।

এবার করোনাভাইরাস মহামারী এই সংখ্যা আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে উন্নয়ন সংস্থাগুলো।

বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে ১৫টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত ‘নিরাপদে ইশকুলে ফিরি’ প্রচারাভিযানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও সেই শঙ্কাই ধ্বনিত হয়।

অনুষ্ঠানে মহামারী কালে শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশ না নেওয়া ও ঝরে পড়ার বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে মূল প্রবন্ধ পড়েন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কে এ এম মোরশেদ।

‘ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন’র জরিপ টেনে তিনি বলেন, ৩৮ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ৪১ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ৪০ শতাংশ অভিভাবক, ৪৭ শতাংশ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ৩১ শতাংশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা করছেন।

“তাদের আশঙ্কা ২০ থেকে ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর ঝরে পড়বে।”

এই তথ্য শুনে অনুষ্ঠানের অতিথি মাউশির মহাপরিচালক গোলাম ফারুক বলেন, “ড্রপআউটের একটা আশঙ্কার কথা আপনারা বলেছেন, আপনারা বিভিন্ন মানুষের মতামত নিয়ে বলেছেন।

“আমার অফিসের লেটেস্ট একটা তথ্য আজকে নিলাম। অফিস থেকে আমাকে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য দিল। তারা বলল, ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে। তাহলে ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর বেশি ঝরে পড়ার কথা নয়। কেননা যারা অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে, তারা তো ঝরে পড়ার কথা না।”

এ ধরনের গবেষণা ‘ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“যে গবেষণার কথাগুলো আপনারা বললেন, ব্যাপারগুলো ভালো করে না দেখলে ভুল বার্তা যাবে মানুষের কাছে।”

২০২০ সালের মে মাসে ব্র্যাকের জরিপে বাংলা মিডিয়াম ও মাদ্রাসার ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশন ক্লাসে অংশ নেয়নি বলে যে তথ্য এসেছে, তা নিয়েও দ্বিমত প্রকাশ করেন সৈয়দ গোলাম ফারুক।

তিনি বলেন, “আমাদের টিভি ক্লাসগুলোতে সমান শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে না। যখন প্রথম টিভি ক্লাস শুরু হয়, তখন অনেক বেশি শিক্ষার্থী টিভি ক্লাসে অংশ নিয়েছে।

“পরে যখন অনলাইন ক্লাস শুরু হল, তখন শিক্ষার্থীরা সেটিকে বেছে নিল। কেননা এখানে শিক্ষকের সাথে কথা বলা যায়, শিক্ষককে প্রশ্ন করা যায়। টিভি ক্লাসে তো প্রশ্ন করা যায় না। তখন টিভি ক্লাসের দর্শক কমে গেল। এখন ডাটাটা কখন নিয়েছেন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

মাউশির মহাপরিচালক বলেন, “ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন গবেষণায় বলেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও টিভি ক্লাসেও অংশ নেয়নি। কখন ডাটা নিয়েছেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম। শুনলাম তারা ডিসেম্বরে ডাটা নিয়েছে। ডিসেম্বরে আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট হয়েছে এবং অ্যাসাইনমেন্টগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেন বই দেখে বই পড়ে তারা উত্তরটা দেয়।

“পপুলার এডুকেশন যখন ডাটা নিয়েছে, তখন ৩০ শতাংশও শিক্ষার্থী ক্লাস করার কথা না। কারণ তারা তখন অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিল।”

বাবা দুপুরের খাবার খেতে গেছে, সেই ফাঁকে ছোট্ট মুড়ির দোকানটি সামলাচ্ছে সাকিব আল হাসান। পুরান ঢাকার ইসলামবাগে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে মুড়ি মাখা বিক্রি করতে দেখা যায় শিশুটিকে।

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন, “আমরা যখন রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে ব্রডকাস্টিং শুরু করি, দেশের সব জেলা থেকে একটা সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছি। এখানে যে পরিসংখ্যানটা আপনারা দিয়েছেন, সেটার সাথে আমাদেরটার মিল নেই।”

এসব গবেষণার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গোলাম ফারুক বলেন, “এই গবেষণাগুলোর আসলে কোনো বেইজলাইন নাই। আমি প্রতি সপ্তাহে গ্রামে যাই এবং দেখি তারা কী অবস্থায় আছে। আমার কাছে মনে হয় না যে, বিষয়টা এত বেশি গুরুতর।”

ওয়ার্ল্ড ভিশনের পরিচালক টনি মাইকেলের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “সরকার আর এনজিও এর তথ্যের মধ্যে অনেক সময় অনেক তফাৎ থাকে। দুজনের উদ্দেশ্য অনেক সময় ভিন্ন থাকে। সেই কারণে অনেক তথ্যেরও ভিন্নতা থাকে। আমি সেটা নিয়েও খুব বেশি বলতে চাই না।”