টিকাদান পরিকল্পনায় পরিবর্তন, প্রথম মাসে দেওয়া হবে ৩৫ লাখ ডোজ

প্রথম মাসের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের গণ টিকাদান পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2021, 06:18 AM
Updated : 4 Feb 2021, 06:20 AM

৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকাদান শুরু করে প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এখন তার বদলে এ মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

খুরশীদ আলম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে টিকা বিতরণ সম্পর্কিত একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর পরিকল্পনায় এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।”

বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দিতে হবে।

ইতোমধ্যে সরকারের কেনা ৫০ লাখ ডোজ এবং উপহার হিসেবে ভারতের পাঠানো ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। অর্থাৎ এখন সরকারের হাতে আছে ৭০ লাখ ডোজ টিকা।

সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সরকারের করা চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে আগামী জুনের মধ্যে বাকি আড়াই কোটি ডোজ টিকা দেশে পৌঁছানোর কথা।  

চলতি বছরের প্রথমার্ধে কোভ্যাক্স থেকে আরও সোয়া এক কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা পেতে পারে বাংলাদেশ। সেটাও সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ডের টিকা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন এই প্ল্যাটফর্ম।

ভারত থেকে দেশে আনার পর ঢাকা থেকে জেলায় জেলায় টিকা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করছে বাংলাদেশে সেরাম ইন্সটিটিউটের ডিস্ট্রিবিউটর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।

৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান শুরুর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের সব জেলায় টিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সরবরাহ পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

“আমরা চিন্তা করেছি, যদি কোনো কারণে সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে না পারি, তাহলে টোটাল ব্যবস্থাপনা ভেস্তে যাবে। সেজন্য আমরা হাতে থাকা টিকা অর্ধেক করে পুরোপুরি কমপ্লিট ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”

খুরশীদ আলম জানান, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজ দেওয়ার চার থেকে বারো সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যায়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ৩৫ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে দেওয়া হবে।

“৭০ লাখ টিকার অর্ধেক দিয়ে বাকি অর্ধেক রেখে এক মাস পর দেব। এতে অন্তত ৩৫ লাখ লোককে আমরা কমপ্লিট ভ্যাকসিনেশনে আনব। একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে আমরা সুরক্ষিত করে দিই। প্রথম ডোজ দিলাম, কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ যদি পেতে দেরি হয়, তাহলে পুরো বিষয়টি নষ্ট হয়ে যাবে। এর মধ্যে যদি আমাদের দ্বিতীয় লট চলে আসে, তাহলে আগের পরিকল্পনায় চলে যাব।”

টিকা পাওয়া নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে কি না জানতে চাইলে ডা. খুরশীদ আলম বলেন, টিকা নিয়ে সারা বিশ্বে ‘অত্যন্ত ক্রুশিয়াল পলিটিক্স’ চলছে।

“ইউরোপের কয়েকটি দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবারই টিকা দরকার। দেশের চাহিদা যদি না মেটাতে পারে, তাহলে সরকার তো অনুমতি দেবে না রপ্তানির। আমরা এটা আশঙ্কা করছি। যদিও বেক্সিমকো আমাদের এখনও পর্যন্ত বলছে সঠিক সময়েই তারা টিকা দেবে। তারপরও আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করছি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর টিকার নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) সীমিত আকারে উন্মুক্ত করা হয়।

টিকা নিতে আগ্রহী সবাইকেই নিবন্ধনের কাজটি করতে হবে। তবে শুরুতে স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখসারিতে থাকা কর্মীরা, ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরীকরা এবং সরকারের প্রাধিকার তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা টিকা পাবেন। 

নিবন্ধনের অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, প্রথম ধাপের টিকা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত সংখ্যায় নিবন্ধন ‘হয়ে যাবে’।

“প্রথম ধাপের টিকার নিবন্ধন আমাদের ডেটাবেইজে এন্ট্রি করা হিসাব অনুযায়ী হয়ে যাবে। এটা নিয়ে আপাতত আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমাদের চিন্তা পরের লটে যারা টিকা দেবেন।

“আমরা যেমন চিন্তা করেছিলাম, তেমন নিবন্ধন হচ্ছে না, বাট নট ব্যাড, আমি বলব। আমাদের অফিসগুলো, ব্যাংক, পুলিশ, আনসার, আর্মি এখনও নিবন্ধন করেনি। তারা করলে আশা করছি হয়ে যাবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, বুধবার পর্যন্ত ৮৬ হাজারের বেশি মানুষ সুরক্ষা ওয়েবপোর্টালে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

প্রতি মাসে ৩ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আছে বলে এবিএম খুরশীদ আলম জানান।