ঢাকায় এইডিস মশা বেশি যেখানে

জরিপ চালিয়ে দেখা গেল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩ ও ১৬ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে এইডিস মশার উপস্থিতি বেশি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2021, 01:16 PM
Updated : 31 Jan 2021, 01:52 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়ার নির্মূল এবং এইডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এই জরিপ চালিয়েছে, যার ফল রোববার প্রকাশ করা হয়।

জরিপে এই তিনটি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক (ব্রুটো ইনডেক্স-বিআই) ১৬ দশমিক ৬৭ পাওয়া গেছে।

ঢাকা উত্তর বা ডিএনসিসিতে মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বর সেকশন এলাকা নিয়ে ৩ নম্বর এবং গুলশান, বনানী, নিকেতন এলাকা নিয়ে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত।

ঢাকা দক্ষিণে বা ডিএসসিসির ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড গড়ে উঠেছে পুরান ঢাকার রাধিকামোহন বসাক লেইন, আওলাদ হোসেন লেইন, কোর্ট হাউজ স্ট্রিট, শাঁখারীবাজার এবং রায় সাহেব বাজার এলাকা নিয়ে।

রোববার নিপসম মিলনায়তনে জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত ১৮ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ দিন ধরে দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে এই জরিপ চালানো হয়েছে। ডিএসসিসির ৫৯টি এবং ডিএনসিসির ৪১টি স্থানের মোট ৩ হাজার বাড়িতে জরিপ চলে।

এর আগে বর্ষা মৌসুমে চালানো জরিপে ডিএনসিসির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণপুর, পাইকপাড়া ও মধ্য পাইকপাড়া এলাকায় বিআই পাওয়া গিয়েছিল ৪৩ দশমিক ৩। তখন ডিএসসিসির ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের মীর হাজারিবাগ, ধোলাইপার ও গেন্ডারিয়া এলাকায় সর্বোচ্চ বিআই ৪০ পাওয়া গিয়েছিল।

রোববার প্রকাশিত জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, তিন হাজার বাড়িতে জরিপ চালিয়ে ১২৪টিতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৮৭৬টি বাড়িতে তা পাওয়া যায়নি।

এইডিস মশাই ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়ায়, যে রোগটি গত কয়েক বছর ধরে ঢাকাবাসীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল এবং এইডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান।

জরিপের ফলাফল জানিয়ে তিনি বলেন, দুই সিটি করপোরেশনের কোনো এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি পাওয়া যায়নি।

ডিএনসিসির ৮টি এবং ডিএসসিসির ৬টি স্থানে ব্রুটো ইনডেস্ক ১০ এর বেশি পাওয়া গেছে। ডিএনসিসির ১৯টি এবং ডিএসসিসির ৩৭টি স্থানের ব্রুটো ইনডেক্স ১০ এর নিচে। ব্রুটো ইনডেক্স শূন্য পাওয়া গেছে ডিএনসিসির ১৪ এবং ডিএসসিসির ১৬টি স্থানে।

যেসব স্থানে এইডিস মশার পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ৫১ দশমিক ৩৪ শতাংশই বহুতল ভবন বলে বলে জরিপে দেখা গেছে।

এছাড়া ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবন, ১২ দশমিক ৮৩ বস্তি এলাকা, ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ একক ভবন এবং ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ খালি জমি।

ডা. আফসানা বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবছর মশার কিছুটা কম। আমরা জনসচেতনতা তৈরি করতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। সিটি করপোরেশনও মশা নিধনে কার্যক্রম চালিয়েছে। এ কারণে মশা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আছে।”

নির্মাণাধীন ভবনের হাউজে এইডিস মশার প্রজননক্ষেত্র

তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার এতে খানিকটা ভিন্নমত জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্ষা পরবর্তী জরিপটি ডিসেম্বর মাসের শুকনো সময়ে হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টিপাত না থাকায় মশার উপস্থিতি কম পাওয়া গেছে।

এই কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ বলেন, মশার লার্ভা ৬ মাস পর্যন্ত সুপ্ত থাকে। এ কারণে বৃষ্টি হলেই আবার ডিম ফুটে উঠবে। এইডিস মশার প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে।

“আমরা যখন সার্ভে করি তখন বাংলাদেশে কোনো বৃষ্টিপাত নেই। মার্চে যখন বৃষ্টি শুরু হবে তখন যেসব জায়গায় ডিম রয়েছে, তা থেকে মশা হবে।”

“এই জরিপে মশার উপস্থিতি কম পাওয়া গেলেও খুব বেশি সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই,” বলেন তিনি।

এজন্য মশা নিধনে কার্যক্রম পুরোদমে চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জিদ খুরশিদ রিয়াজ, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম, ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জোবায়েদুর রহমান ও ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরিফ আহমেদ, আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।