কোভিড-১৯: আশা জাগাচ্ছে সংক্রমণের নিম্নগতি

বাংলাদেশে টানা ১৩ দিন ধরে দৈনিক শনাক্তের হার সরকারি হিসেবে ৫ শতাংশের নিচে; আর ছয় দিন ধরে এই হার ৪ শতাংশের নিচে রয়েছে।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2021, 06:17 PM
Updated : 31 Jan 2021, 06:17 PM

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা করা যায়। তবে সংক্রমণ যেন আর বাড়তে না পারে, সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

রোববার পর্যন্ত দেশে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৩৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ হাজার ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলের পর গত ১৪ জানুয়ারি প্রথমবারের মত দৈনিক নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত রোগীর হার ৫ শতাংশের নিচে নামে। সেদিন সংক্রমণের হার ছিল ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।

মাঝে কয়েক দিন শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের বেশি থাকলেও ১৯ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি-টানা ১৩ দিন শনাক্তের হার রয়েছে চার শতাংশের ঘরে।

এর মধ্যে ২৬ জানুয়ারি শনাক্তের হার ৪ শতাংশের নিচে নেমে আসে এবং সেই ধারা অব্যাহত থাকে। শনি ও রবিবার নমুনা পরীক্ষায় ৩ শতাংশ করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়, যা ৪ এপ্রিলের পর সবচেয়ে কম।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ৬ এপ্রিল দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ৫ শতাংশের ওপরে উঠে গিয়েছিল। মের শেষ দিক থেকে অগাস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত তা ২০ শতাংশের উপরেই থাকে। এর মধ্যে ১২ জুলাই তা ৩৩.০৪ শতাংশে পৌঁছায়, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। 

সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে দৈনিক শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের নিচেই ছিল, মাঝে কেবল একদিন তা ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছিল।

 

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী পরপর দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। এরপর বলা যাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে।

“পরিস্থিতি অনেকদিন ধরেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে এটা ধরে রাখতে হবে। একটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।”

ডা. ফ্লোরা বলেন, একদিকে সংক্রমণের হার কমছে, অন্যদিকে দেশে টিকাও চলে এসেছে। এ সময় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমে যেতে পারে, কিন্তু তা হলে চলবে না।

“স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে আরও বেশি। এখানে কোনো ঢিলেমি করা যাবে না। আমরা যদি কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশন, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানাতে পারি, তাহলে এটা আমরা আরও কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পারব। ভ্যাকসিন দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানা গুরুত্বপূর্ণ।”

সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে জানিয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, “পাশাপাশি আইইডিসিআরকেও নির্দেশনা দিয়েছি কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং, সার্ভেইলেন্স কার্যক্রম চালানোর জন্য।

সংক্রমণের হার এখন কম থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় জোর দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে, কিন্তু দেশের বড় একটি অংশকে টিকা দিতেও অনেক সময় লাগবে। তাই স্বাস্থ্যবিধিতে ছাড় দেওয়া যাবে না।

“মাস্ক সবাইকে পরতে হবে, হাত নিয়মিত ধুতে হবে। নিয়ম না মানলে সংক্রমণ আবার বেড়ে যেতে পারে। আমরা যদি মাস্ক না পরি, সামাজিক আচার অনুষ্ঠান বাড়িয়ে দিই, বিয়েবাড়ি, যাত্রা-থিয়েটার ওয়াজ মাহফিল করে বেড়াই তাহলে আবার বেড়ে যেতে পারে। এজন্য লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।”

ফাইল ছবি

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর সব মিলিয়ে হিসাব করলে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে গত চার মাসের হিসাবে দেখা গেছে, সংক্রমণের হার ক্রমাগত কমেছে।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে সারাদেশে ৪ লাখ ২৪ হাজার ১৩১টি নমুনা পরীক্ষায় ২১ হাজার ৬১৯ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে জানুয়ারি মাসে গড় শনাক্তের হার ৫ দশমিক ০৯ শতাংশ।

অক্টোবর মাসে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯৪০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৪ হাজার ২০৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গড় শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

নভেম্বরে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩৯টি নমুনা ৫৭ হাজার ২৪৮ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। নভেম্বরে গড়ে শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ হয়।

ডিসেম্বর মাসে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৮ হাজার ৫৫১ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ মাসে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের গড় হার ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে সরকারকে পরামর্শক দিয়ে আসা কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংক্রমণের হার নিম্নগামী, এটা আরও অন্তত এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ সংক্রমণ যে কোনো মুহূর্তে বেড়ে যেতে পারে।

“এখন আমাদের করনীয় আমাদের যত রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তাদের আইসোলেশন করা। যাদেরই করোনাভাইরাসের লক্ষণ আছে, পরীক্ষা করে তা নিশ্চিত করা।”