জন্মতারিখ বদলের ‘অযৌক্তিক’ আবেদনে জটিলতা বাড়ে: আইনমন্ত্রী

অনেকে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ পরিবর্তনের জন্য ‘অযৌক্তিক’ আবেদন করেন, যার ফলে সংশোধনের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয় বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2021, 12:13 PM
Updated : 28 Jan 2021, 12:13 PM

সংসদ কাজে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক এ মন্তব্য করেন।

জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘তড়িঘড়ি’ জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করতে গিয়ে পিতার নামের জায়গায় মায়ের নাম, প্রকৃত নামের জায়গায় অন্য কারও নাম, নামের বানান ভুল- এরকম নানা সমস্যা হয়। সেসব সংশোধনী করতে গেলেও হয়রানির ‘অন্ত নেই।

এ পরিস্থিতিতে নির্ভুল জাতীয় পরিচয়পত্র জনগণ যাতে পায়, তার সুব্যবস্থা হবে কী না- তা জানতে চান এই সাংসদ।  

জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী ২০০৭-৮ অর্থ বছরে ভোটার তালিকার ডেটবেইজ গড়ে তোলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ টেকনিক্যাল জনবল না থাকায় এবং সময় স্বল্পতার কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ভুল-ভ্রান্তি ছিল, যার অধিকাংশই ‘বানানজনিত ভুল’।

“বিভিন্ন পর্যায়ে পরিলক্ষিত ভুলসমুহের বিষয়ে আইন ও বিধি অনুসারে নির্বাচন কমিশন সংশোধনের সুযোগ দিলেও অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে অনেকেই যথাসময়ে সেই সেবা গ্রহণ করেনি। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্রে লিপিবদ্ধ তথ্যাদির ক্ষেত্রে এখনো কিছু ভুল বিদ্যমান।

“তবে, সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত অবেদনসমূহে চাওয়া দাবি অনেকক্ষেত্রে অযৌক্তিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত। ফলে ওইসব আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যথাযথ প্রমাণপত্র/দলিলাদি দাখিলসহ ক্ষেত্রবিশেষ তদন্ত/পুনঃতদন্তের প্রয়োজন পড়ে। এ সকল আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার উদ্ভব ঘটে এবং দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। এ কারণে বিশেষ করে সাংবাদিক মহল বিরাগভাজন হয় এবং এতদসংক্রান্ত সেবা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে যা সম্পূর্ণ সত্য নয়।”

এনআইডি সেবা দ্রুততার সাথেই সম্পন্ন করা হচ্ছে দাবি করে আনিসুল হক বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন বা পরিবর্তনের আবেদন সাধারণভাবে ৩০ কার্যদিবসে নিষ্পত্তি করার কথা। তবে সঠিক দলিলপত্র যুক্ত করে ‘যৌক্তিক’ সংশোধনের আবেদন করলে ৫/৬ দিনেই তা হয়ে যায়।

তিনি বলেন, যদি দেখা যায়, আবেদনকারীর নিবন্ধন ফরমে সঠিক জন্ম তারিখ দেওয়ার পরও এনআইডিতে মুদ্রণে ভুল হয়েছে, তাহলে তা সংশোধন/পরিবর্তনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষাগত সনদসহ আবেদন করলে ৫/৭ কার্যদিবসেই তা হয়ে যায়।

“কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কিছু কিছু নাগিরক উদ্দেশ্যমূলকভাবে জন্মতারিখ পরিবর্তন করতে আবেদন করে থাকেন, যা একেবাবেই অযৌক্তিক। একই ব্যক্তি নিবন্ধনকালে একটি জন্মতারিখ দেন, আবার সংশোধনের জন্য ভিন্ন জন্ম তারিখ উল্লেখিত জন্ম সনদ/উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়/কারিগরী/মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের সনদ জমা দিয়ে জন্ম তারিখের পরিবর্তন চান, যা সংশোধনের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি করে এবং ওই সনদে উল্লেখিত বয়সের সাথে ব্যক্তির বাস্তবিক বয়সের মিল থাকে না।”

আইনমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন নির্ধারণ/বেতন প্রাপ্তিতে এনআইডির তথ্য ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

“কিন্তু এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কতিপয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় পরিচয়পত্র আমলে না নিয়ে শুধুমাত্র জন্ম সনদের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করছে।”

বর্তমানে ঘরে বসে অনলাইনেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করা যায় এবং ঘরে বসেই প্রিন্ট করে পরিচয়পত্র নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে সংসদকে তথ্য দেন মন্ত্রী।

এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক জানান, সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদের পর বর্তমানে দেশে খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ১২ লাখ ৮৪ হাজার ১৫৮ জন। আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৬৯ হাজার ৯০৪টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর তৈরি করে পুনর্বাসন করার তথ্য তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের জুনে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দেশের ‘সব’ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের তালিকা করা হয়েছে।

তালিকা অনুযায়ী দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১ এবং জমি আছে, কিন্তু ঘর নেই, এমন পরিবারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ২৬১টি।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।