বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের সাউথ এশিয়া সেন্টার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
অমর্ত্য সেন বলেন, “ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার না করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর শক্তিশালী স্বতন্ত্র যে ধরন ছিল, বর্তমান সময়ে তার বিস্তৃত ব্যবহার রয়েছে। যা কেবল বাংলার জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়নে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে বিশেষভাবে উপস্থাপনের প্রসঙ্গ বক্তৃতায় তুলে ধরেন তিনি।
অমর্ত্য সেন বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সেকুলারিজম ধারণার মানে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে না, এমন নয়। সেটা ছিল ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার হবে না।
বঙ্গবন্ধুর দর্শনের কথা বলতে গিয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে ষোড়শ শতকের সম্রাট আকবরের মতাদর্শের প্রসঙ্গেও অমর্ত্য সেন বলেন।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ও আকবরের মতাদর্শ এখনও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটা কেবল ভারতে ব্যবহৃত হতে পারে তা নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও প্রাসঙ্গিক।
“ইউরোপ-আমেরিকার রাজনৈতিক আলোচনায় তাদের ধারণার ব্যবহার হতে পারে। এটা হয়ত কেবল ধর্মীয় দিক থেকে নয়, বর্ণবাদ ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর অধিকারের আলোচনায়ও আসতে পারে।”
বঙ্গবন্ধুকে ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার মতাদর্শ থেকে শেখা ও অনুসরণের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে অনিশ্চিত ভোটারের সামনে সমতার ধারণা তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে অমর্ত্য সেন বলেন, “সমতাবাদী এই নীতিতে আওয়ামী লীগের সেক্যুলার অবস্থান ভোটে জিতে আসতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কারণ এর পেছনে ছিল জনমত গঠনের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ ক্ষমতা।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্রের ধারণা এসেছে তার উদঘাটিত অভিজ্ঞতার আলোকে। কারণ তিনি তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে তার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ করেছেন।”
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের এই সদস্য বলেন, “বঙ্গবন্ধু তার নীতি পরামর্শ হিসাবে বার বার আমাদের কাছে গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন, কোনো পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক নীতি কিংবা সমাজ গঠন করা যাবে না, যা সুযোগ-সুবিধা দেবে বাঙালি মধ্যবিত্তকে, যারা অচিরেই শাসক শ্রেণি হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
“আমাদেরকে এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই হবে সম্পদ তৈরি এবং উপকারভোগী হওয়ার ক্ষেত্রে অংশীদার ও শাসক। এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর মূল এজেন্ডা।”
এ ধরনের সামাজিক পরিবর্তনের কারণে অভিজাত শ্রেণি অনেক ক্ষেত্রে তাকে মেনে নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের পরিচালক অধ্যাপক মিনোশ শফিকের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের সাউথ এশিয়া সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আল নূর ভিমানি এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম বক্তব্য দেন।