টিকায় অগ্রাধিকার কাদের, সংসদে তথ্য দিলেন প্রধানমন্ত্রী

সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাদের করোনাভাইরাসের টিকা দিতে চায়, সেই তথ্য জাতীয় সংসদকে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2021, 07:07 AM
Updated : 27 Jan 2021, 07:25 AM

তিনি জানিয়েছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৩ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা সাজিয়েছে তার সরকার।

বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলামের (টিটু) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

ইতোমধ্যে ভারতের উপহারের ২০ লাখ এবং সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া থেকে কেনা ৫০ লাখ অক্সফোর্ডের টিকা দেশে পৌঁছেছে। বুধবার কুর্মিটোলা হাসপাতালের একজন নার্সসহ ২৫ জনকে এই টিকা দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

সরকার প্রধান সংসদে বলেন, সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৬ মাসের মধ্যে মোট তিন কোটি ডোজ টিকার সরবরাহ পাওয়া যাবে। এর বাইরে প্রয়োজন অনুযায়ী আরো টিকা কেনার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

আহসানুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের আওতায় বিশ্বের ৯২টি দেশের মত বাংলাদেশও মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য টিকা পাবে। তাতে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ও দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই টিকাদানের অগ্রাধিকার তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে দেশের জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ (মোট ১ কোটি ৫০ লাখ) মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।

অগ্রাধিকারে যারা

কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চার লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী, অনুমোদিত ছয় লাখ বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, দুই লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ জন সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জন সদস্য আগে টিকা পাবেন।

রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য্য ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৫০ হাজার গণমাধ্যম কর্মী, এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দেড় লাখ কর্মচারী, পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ধর্মীয় প্রতিনিধি, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার ব্যক্তি, জরুরি সেবার (পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস, পরিবহন কর্মী) চার লাখ কর্মী, স্থল, নৌ ও বিমান বন্দরের দেড় লাখ কর্মী, এক লাখ ২০ হাজার প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিকও আছেন অগ্রাধিকারের তালিকায়।  

জেলা উপজেলায় কর্মরত চার লাখ জরুরি সেবার সরকারি কর্মচারী, এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার (যক্ষ্মা, এইডস, ক্যান্সার) ছয় লাখ ২৫ হাজার জনগোষ্ঠী, ৬৪ থেকে ৭৯ বছর বয়সী এক কোটি তিন লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮ জন্য ব্যক্তি, ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন জনগোষ্ঠী, জাতীয় দলের খেলোয়াড় ২১ হাজার ৮৬৩ জন আগে টিকা পাবেন।

এছাড়া বাফার, ইমার্জেন্সি ও আউটব্রেক মোকাবেলায় ১ লাখ ৭০ হাজার টিকা সংরক্ষণ করা হবে।

কোভিড মোকাবেলায় ঋণ-অনুদান

জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশ, বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এক হাজার ৮১৭ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে এক হাজার ৬৪০ ডলার; আর ১৭৭ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার মিলবে অনুদান হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে এক হাজার ৫২০ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড় হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আগামীতে বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও ফ্রান্সের থেকে এক হাজার ৯১৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া টিকার অর্থায়নসহ আরও বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার জন্য কাজ চলছে।

বেনজীর আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান জানান, ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে ২৫০ কিলোমিটার সাবওয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো নির্মাণে ৩২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে স্ম্ভাবত্য সমীক্ষা চলছে। এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।

স্ম্ভাবত্য সমীক্ষার মাধ্যমে অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে যথাসময়ে এর বাস্তবায়ন শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।