এইচএসসির ফল প্রকাশ, সনদ বিতরণের ক্ষমতা পেল সব শিক্ষাবোর্ড

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল প্রস্তুত, প্রকাশ ও সনদ বিতরণের ক্ষমতা শিক্ষা বোর্ডগুলোকে দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2021, 04:08 AM
Updated : 27 Jan 2021, 04:11 AM

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে জারি করা তিনটি গেজেটের মাধ্যমে নয়টি সাধারণ বোর্ডের সঙ্গে মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, চলমান বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় এ সংক্রান্ত আইনগুলো সংশোধন করা হয়েছে।

ওইসব সংশোধিত আইনের ক্ষমতাবলে এ সংক্রান্ত গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বোর্ডগুলোকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বোর্ডগুলো উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রস্তুত, প্রকাশ ও সনদ বিতরণের ক্ষমতা পাওয়ায় এখন ফল প্রকাশের সব বাধা দূর হলে বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।  

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমিরুল ইসলাম মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফলফল প্রস্তুত আছে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে ফলাফল প্রকাশের তারিখ চূড়ান্ত করবেন।”

১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থীর এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ এপ্রিল থেকে।

কিন্তু করোনাভাইসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার আগে এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলেও আটকে যায় এইচএসসি পরীক্ষা।

মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পরীক্ষা নেওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনীর মত এইচএসসি পরীক্ষাও নেওয়া যাচ্ছে না।

সেদিন তিনি জানান, অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসির ফলাফলের গড় করে ২০২০ সালের এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে। জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষিত হবে।

কিন্তু আইনে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশের বিধান থাকায় তা সংশোধন করে বিশেষ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা ছাড়াই ফল প্রকাশের বিধান যুক্ত করতে হয়েছে, যা রোববার জাতীয় সংসদের অনুমোদন পায়।

সংসদে পাস হওয়া তিনটি বিলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সই করার পর সোমবার রাতে‘ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-২০২১’ ‘বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২১’, ‘বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২১’ গেজেট আকারে জারি কর সরকার।

আইনগুলো সংশোধন হওয়ায় এখন বিশেষ পরিস্থিতে অতিমারী, মহামারী, দৈব দুর্বিপাকের কারণে বা অনিবার্য পরিস্থিতিতে কোনো পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ এবং সনদ করা সম্ভব না হলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত আদেশ দিয়ে কোনো বিশেষ বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা ছাড়াই বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিয়ে প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন এবং সনদ দেওয়ার নির্দেশ জারি করতে পারবে।

এমনিতে প্রতিবছর শিক্ষমন্ত্রী নির্দিষ্ট দিন সকালে বোর্ড প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। পরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

মহামারীর মধ্যে এবার সেই আনুষ্ঠানিকতাতেও পরিবর্তন আসছে। তবে কীভাবে তা হবে, তা এখনও সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়নি।

মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় গত ৩১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী সেদিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। পরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তন থেকে ফেইসবুক লাইভে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।