গৃহহীনদের ঘর উপহার সবচেয়ে বড় উৎসব: প্রধানমন্ত্রী

মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর উপহার বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2021, 06:42 AM
Updated : 23 Jan 2021, 02:09 PM

৬৬ হাজার ১৮৯টি গৃহহীন পরিবারের হাতে শনিবার ঘরের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, “আজকে এটাই সবচেয়ে বড় উৎসব, এর চেয়ে বড় উৎসব বাংলাদেশের মানুষের হতে পারে না।”

ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব পরিবারকে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন ৪৯২টি উপজেলার মানুষ। তাদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথাও বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন এই মানুষগুলো এই ঘরে থাকবে তখন আমার বাবা-মার আত্মা শান্তি পাবে। লাখো শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। কারণ এসব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তো ছিল আমার বাবার লক্ষ্য।”

তিনি বলেন, “খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল নিজে আপনাদের হাতে জমির দলিল তুলে দিই। কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য হল না।

“তারপরেও আমি মনে করি, দেশ ডিজিটাল হয়েছে বলেই এভাবে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমরা প্রত্যেক শ্রেণির জন্য কাজ করছি। সব মানুষকেই জন্য ঠিকানা করে দেবো, এটাই আমার লক্ষ্য।”

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

মুজিববর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার ধারাবাহিকতায় পৌনে ৯ লাখ গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারের তালিকা হয়।

তার মধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে শনিবার ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারকে ঘরের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এক দিনে এত মানুষকে ঘর দিতে পারলাম, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না। যাদের গৃহ নেই তাদের ঘর করে দিতে পারা অসাধ্য সাধন করতে পারলাম, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর হতে পারে না।”

বাগেরহাটে ঘরের চাবি পেয়ে শ্রীঘাট গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, “একদিন এলাকায় মাইকের শব্দ কানে এল। বলা হচ্ছিল, যাদের জমি নাই, ঘরও নাই তাদের ঘর দেওয়া হবে। ইউনিয়ন পরিষদে যেয়ে নামের তালিকা জমা দিতে বলা হয়।

“আমি এই সংবাদ পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যেয়ে আমার নাম জমা দেই। এরপর একদিন ইউনিয়নের সব ভূমি ও গৃহহীনদের উপস্থিতিতে প্রশাসন লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে। ওই লটারিতে আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়।”

যশোরে ঘর পেয়ে শাহিনুর বেগম বলেন, “জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। এখন আমাদের মা জননী হাসিনা জায়গা দিয়েছে, ঘর দিয়েছে- আমি তাতে অনেক খুশি।

“তার জন্য নামাজ পড়ে মোনাজাত করব। আমাদের মতো গরিবদের পাশে যেন সে সারা জীবন থাকতে পারে। আমাদের চোখের পানিটা যেন মুছে যায়। দোয়া করি, প্রধানমন্ত্রী সারা পৃথিবীর কাছে সম্মান পায়।”

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই এত বড় অসাধ্য সাধন হয়েছে।

“প্রশাসন যারা আছেন, তারা সরাসরি কাজগুলো করেছেন বলে এত দ্রুত হয়েছে। এত অল্প সময়ে এত ঘর করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বিশ্বে একসাথে এত মানুষকে ঘর দেওয়া নজিরবিহীন।”

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

শেখ হাসিনার পছন্দ করা নকশায় নির্মাণ করা হয়েছে এই প্রকল্পের ঘর। প্রতিটি ঘরে থাকছে দুটি শয়ন কক্ষ, একটি লম্বা বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট। এসব ঘরের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

তারা শুধু ঘর নয়, সঙ্গে পাচ্ছেন ভূমির মালিকানাও। প্রত্যেককে তার জমি ও ঘরের দলিল নিবন্ধন ও নামজারিও করে দেওয়া হচ্ছে।

দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে এর আগে এত মানুষকে এক দিনে সরকারি ঘর হস্তান্তর করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বে এর আগে এক দিনে এত বেশি ঘর বিনামূল্যে হস্তান্তর করা হয়নি।

ছবি: এস এম গোর্কি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আশ্রয়ণের সাথে বেদে, দলিত, হিজড়াদের ঘর করে করে দিয়েছি।”

উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলায় উপকারভোগীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। এ সময় জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এই ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলা হচ্ছে।