চতুর্থ শিল্প বিপ্লবেও জাতিকে পথ দেখাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রধানমন্ত্রী

অতীতে যেমন জাতীয় প্রতিটি অর্জনে পথ দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তেমনি দেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতেও এই প্রতিষ্ঠান জাতিকে নেতৃত্ব দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2021, 09:12 PM
Updated : 21 Jan 2021, 09:12 PM

সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান ও গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত ‘সেলিব্রেটিং হান্ড্রেড ইয়ারস অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা: রিফ্লেকশনস ফ্রম দ্য অ্যালামনাই- ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ন্যাশনাল’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখলে হবে না। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেটা আমাদের প্রতিটি অর্জনের পথ দেখিয়েছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয় আরও সুন্দরভাবে উন্নত হোক সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

“আাগামী দিনে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে দক্ষ মানব সম্পদ দরকার। সেই দক্ষ মানব সম্পদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই গড়তে পারে। এখান থেকে সেটা শুরু হবে, যাকে অনুসরণ করে বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রাখবে। আমাদের দেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এক সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হত। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা দেখেছি অস্ত্রের ঝনঝনানি। জাতিকে একটা ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখন আর সেই বোমাবাজি ও অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই।

“আমরা চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার আগের গৌরব ফিরে পাক। এখানে জ্ঞানের চর্চা হবে, গবেষণা হবে, শিক্ষার প্রসার ঘটবে। আমাদের সকল অর্জনের বাতিঘর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো ছড়িয়ে পড়বে সারা বাংলাদেশে।”

অনুষ্ঠানে ভার্চয়ালি যুক্ত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মানের বিবেচনায় আমরা এখনও কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে পৌঁছাতে পারিনি। এ থেকে উত্তরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই দায়িত্ব নিতে হবে।

“শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক প্রভাব সারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তাই আমাদের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সময়োপযোগী কার্যসূচি ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করে বৈশ্বিক সূচকে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সাধন করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।

তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অভূতপূর্ব বিস্তার ঘটেছে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা যারা একবিংশ শতাব্দীর উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনে আগ্রহী, তাদের দায়িত্ব শুধু শিক্ষার বিস্তার নয়, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মানকে সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

“এই জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু করা উচিত। যেখানে শুধু এটির প্রতিষ্ঠানকালীন মিশনকেই পুনরুদ্ধার নয়, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে যে ঐতিহ্য ছিল, তা পুনরুত্থিত করতে পারে। আর এজন্য পদ্মা সেতুতে যেমন ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়েছে, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্বিনির্মাণে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন।”

মূল প্রবন্ধে রেহমান সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নত করতে শিক্ষার পরিবেশ, আবাসন সমস্যা দূর করা, হলগুলো দলীয় আধিপত্যমুক্ত রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তা ও জ্ঞানের স্বাধীনতা নিশ্চিতে গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কাম্য।”

চলতি বছর ১ জুলাই প্রতিষ্ঠার একশ বছর পূর্ণ হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। শতবর্ষ পূর্তির

কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছয়টি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে একটি করে বিষয়ের উপর তিন দিনব্যাপী ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ২২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি ‘হিস্ট্রি অব দ্য ইউনিভার্সটি অব ঢাকা অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রথম ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর ২৫-২৭ ফেব্রুয়ারি ‘সায়েন্স ফর সোসাইটি’, ২৮-৩০ মার্চ ‘আর্টস, লিটারেচার অ্যান্ড কালচার’, ২৫-২৭ এপ্রিল ‘বিজনেস ফর সাস্টেইনেবিলিটি’, ২৩-২৫ মে ‘সোশ্যাল সায়েন্স ফর লাইফ অ্যান্ড লিভিং’, ১৩-১৫ জুন ‘ফিউচারস অব হায়ার এডুকেশন’ শীর্ষক ওয়েবিনার হবে।

ওয়েবিনারের আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য-সচিব ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল।