চীন ‘সত্যিই চাইলে’ প্রভাবিত হবে মিয়ানমার: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

রোহিঙ্গাদের মিয়ামনারে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে চীনের উদ্যোগের উপর আস্থা রাখতে চাইছেন বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2021, 06:53 PM
Updated : 20 Jan 2021, 06:57 PM

তার বিশ্বাস, চীন ‘সত্যিকারভাবে’ চাইলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানো ‘সম্ভব’।

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে বুধবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের যেমন চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, একইভাবে মিয়ানমারের সঙ্গেও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, মিয়ানমারের উন্নয়নে চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

”সেই জায়গায় চীন যদি সত্যিকারভাবে চায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তারা মিয়ানমার সরকারকে প্রভাবিত করতে পারবে।”

মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রোহিঙ্গাদের জন্য চীন সরকারের দেওয়া জরুরি চাল সহায়তার জন্য অনলাইন সার্টিফিকেট স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দিচ্ছিলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।

ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসিন এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ওই সার্টিফিকেটে সই করেন।

প্রতিমন্ত্রী এনাম বলেন, “মানবিক কারণে মিয়ানমারের ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দিয়েছে । তাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজ দেশে ফেরানো যায়, ততই সবার জন্য মঙ্গল ।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রত্যাবাসনের জন্য যে তালিকা দিয়েছে, তার মধ্যে ৪১ হাজার ৭১৯ জন রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করেছে মিয়ানমার। এই তালিকা ধরে আগামী মার্চ-এপ্রিলে প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চলমান ত্রিপক্ষীয় আলোচনার অগ্রগতি জানতে চাইলে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ”গতকাল বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সব বিষয়ে পজিটিভ আলোচনা হয়েছে।

”মিয়ানমার অনুধাবন করেছে, তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া দরকার। বাংলাদেশও ফিল করে, তারা (রোহিঙ্গা) সম্মানের সঙ্গে নাগরিক অধিকার নিয়ে ফিরে যাক। চীন সরকারও চায়, বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে তাদের ফিরে যাওয়া উচিত।”

এনাম বলেন, “বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের গ্রাম ভিত্তিক প্রত্যাবাসন চায়। কিন্তু মিয়ানমার সরকার চায় বাংলাদেশ সরকার যে তালিকা দিয়েছে এবং যে তালিকাটা তারা ভেরিফাই করেছে, সেই তালিকা অনুযায়ী ফেরত নিতে।

”এই জায়গায় গতকালকের মিটিং শেষ হয়েছে। আশা করি পরবর্তী মিটিংয়ে আরও অ্যামিকেবল সলিউশন আসবে। আমরা গতকাল চীন ও মিয়ানমারের যে সদিচ্ছা দেখেছি, সবাই আশা করছে, তিনটি পক্ষই আশা করছে- আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে প্রত্যাবাসানটা শুরু হবে; আমরা একটা ভাল ফলাফলের অপেক্ষায় আছি।”

এনামুর রহমান বলেন, “আমাদের বক্তব্য ও গতকালের মিটিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তাদের শতভাগ ইচ্ছা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক তারা বজায় রাখবেন, বাংলাদেশের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য তারা আমাদের পাশে থাকবেন। স্পেশালি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে তারা কাজ করে যাবেন।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৮ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সেখান থেকে তারা (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। মিয়ানমার সরকার ৪১ হাজার ৭১৯ জনকে ভেরিফাই করেছে। তাদের নেওয়ার কথা তারা জানিয়েছে।”

এ অনুষ্ঠানে যে চুক্তি হল, তার আওতায় রোহিঙ্গাদের জন্য চীন সরকার ২ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন চাল দিয়েছে বলে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “গত ডিসেম্বরে এই চাল আমরা পেয়েছি। চাল এখনও রোহিঙ্গাদের বিতরণ করা হচ্ছে। সেজন্য আজকে একটি সাইনিং হয়েছে।”

অন্যদের মধ্যে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্মসচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।