‘প্রিন্সের’ চিরপ্রস্থান

কয়েকমাস আগে রেলপথ পেরোনর সময় ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছিল ‘প্রিন্স’।কোমর, একটি পাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত ছিল গুরুতর; ঠিক মতো হাঁটতেও পারত না। লোকজন ধরাধরি করে তার বাসস্থানেই নিয়ে এসে চিকিৎসা দিচ্ছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2021, 10:09 AM
Updated : 20 Jan 2021, 10:09 AM

কিন্তু সব চেষ্টা বিফল করে দিয়ে চিরবিদায় নিয়েছে মালিবাগের অলিগলিতে যুবরাজের মতো রাজসিক ভঙ্গিতে ঘুর বেড়ানো ‘প্রিন্স’ নামের ঘোড়াটি।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মালিবাগের গুলবাগের ল’কলেজের মাঠে ২০ বছরের অধিক সময় বাস করা ঘোড়াটির মৃত্যুর হয়।

‘প্রিন্স’র খাবারেও ছিল অনেক বাছবিচার। বাসি-পচা, নোংরা কিছু তার মুখে উঠত না। শুধু টাটকা রুটি দিলেই তবে মুখে তুলত।ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকে যেমন রাজধানীর মানুষজন ঘরবন্দি ছিল, তেমন ‘প্রিন্স’ও এই মাঠেই থাকত। মালিবাগের গুলবাগ-শান্তিবাগের অলিগলিতে হেঁটে হেঁটে সময় পার করে ঠিক সন্ধ্যার আগেই চলে আসত এই মাঠে ‘প্রিন্স’। সেই দৃশ্য এখন শুধু স্মৃতি।

বুধবার দুপুরে ল’কলেজের মাঠে গিয়ে দেখা যায় এলাকাবাসী কয়েকজন ‘প্রিন্স’কে যেখানে সমাহিত করা হয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে।

‘প্রিন্স’কে প্রায়ই রুটি কিনে খাওয়াতো মর্ডান এডুকেশন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আল-আমীন শিফাত। ঘোড়াটি নেই, শিফাতেরও মন খারাপ।

“আমার মনটা ভালো নেই। প্রিন্সের মারা যাওয়ার খবর আমি প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। পরে যখন একজন আংকেল বললেন, তখন আমার মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছিল না। আই লস মাই সুইট ফ্রেন্ড।”

এখানেই সমাহিত করা হয়েছে ‘প্রিন্স’কে।

আবু জর গিফারী কলেজের কাছে থাকা শিশু রুবায়েত আনাম জানায়, সন্ধ্যার সময় কয়েকটি মোমবাতিও জ্বালিয়ে যায় এলাকার শিশুরা। এভাবেই তারা তিনদিনে শোক পালন করছে।

গুলবাগের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম তপু বলেন, “প্রিন্স চলে গেছে, সবাই দুঃখ পেয়েছে। দেখেন, পুরো গুলবাগ ল’কলেজে কেমন শোকের ছায়া। কারও মুখে হাসি নেই।

“নামের মতোই ঘোড়াটির তার চলার ভঙ্গি, তেজ, শক্তিমত্তা ছিল প্রিন্সের মতো। চকলেট রঙা পশম, ঘাড়ে ও মাথায় কালো কেশগুচ্ছ দেখার মতো ছিল। সে নেই দুইদিন হল। এখন আর প্র্রিন্স এসে গেইটের সামনে দাঁড়ায় না।”

এলাকার পুরনো বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গেছে, ২০/২৫ বছর আগে এক ব্যক্তি দুইটি অর্প বয়সের ঘোড়া নিয়ে গুলবাগে এসেছিলেন। একটি ঘোড়া অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটিকেই রেখেই চলে যান ওই ব্যক্তি। ফেলে যাওয়া সেই ঘোড়াটিই ‘প্রিন্স’। তখন থেকে সে স্বাধীনভাবেই বেড়ে উঠেছে।