কুষ্টিয়ার এসপিকে হাই কোর্টে তলব, অবমাননার রুল

ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ‘লঙ্ঘনের’ অভিযোগের বিষয়ে ব্যখ্যা দিতে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে তলব করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2021, 08:31 AM
Updated : 21 Jan 2021, 10:32 AM

আগামী ২৫ জানুয়ারি তাকে হাই কোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। সেই সাথে এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি হয়েছে।

বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এই আদেশ দেয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. তাহিরুল ইসলাম। পরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর নজরে এলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল ও আদেশ দিয়েছে।”

গত ১৬ জানুয়ারি ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কুষ্টিয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মহসিন হাসানের অভিযোগ, সেদিন দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত এবং পুলিশ সদস্যরা তার সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করেন এবং দায়িত্ব পালনে বাধা দেন।

সেজন্য পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিচার বিভাগীয় এই কর্মকর্তা। সে আবেদনের অনুলিপি আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজি এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়েও পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ ইতোমধ্যে ইসির আইন শাখার যুগ্মসচিবকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। বিষয়টি একজন নির্বাচন কমিশনার মহোদয়কেও (কবিতা খানম, যিনি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস থেকে অবসরে যান) অবহিত করেছেন। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু এখনও পাওয়া যায়নি। পেলে যথাযতভাবে তা উপস্থাপন করা হবে।”

তবে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মহসিন হাসানের অভিযোগের চিঠির অনুলিপি যে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে, সে বিষয়টি মঙ্গলবারই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর।

তবে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত অভিযোগ অস্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। তিনি (মহসিন হাসান) তার দায়িত্ব পালন করেছেন। আর আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি।”

জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মহসিন হাসান ইসিতে পাঠানো তার চিঠিতে পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত ও তার সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালার ২০১০ এর ৬৯,৭০,৭৪,৮০ ও ৮১ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। 

লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এর মধ্যে ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের সময় সকাল ১০টায় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ওই ঘটনা ঘটে।

মহসিন বলেন, ওই কেন্দ্রে ‘কতিপয় ব্যক্তিকে’ ভোট কেন্দ্রের বুথের ভেতর লম্বা বেঞ্চে পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখেন তিনি। এ বিষয়ে কথা বলতে তখন তিনি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে বুথের বাইরে ডেকে আনেন। তখনই এসপি তানভীর আরাফাতসহ ৪০/৫০ জন ওই ভোটকেন্দ্রে ঢোকেন।

“তিনি প্রবেশ করেই প্রিজাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন। তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সাথে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। তখন আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বলি প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে একটি বিষয়ে কথা বলছি। কথা শেষ হলে উনাকে নিয়ে যান।”

“এরপরেও এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান ধমক দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আমার দিকে অগ্রসর হন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করেন- ‘আপনি কে? কী করেন এখানে?’

“আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত স্বরে বলেন, ‘আপনি এখানে কী করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান এখান থেকে’। আমি পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমান্তক চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকি।” 

লিখিত অভিযোগে বিচারিক হাকিম মহসিন বলেন, “পুলিশ সুপার ও তার সঙ্গী ফোর্সদের আচরণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৬৯,৭০,৭৪,৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রার্থনা করছি।”