ভারত থেকে টিকা আসছে বৃহস্পতিবার দুপুরে: স্বাস্থ্য সচিব

বুধবার নয়, ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে পৌঁছাবে বৃহস্পতিবার দুপুরে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2021, 06:53 AM
Updated : 21 Jan 2021, 06:22 AM

আর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারিভাবে বাংলাদেশের কেনা টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ ২৫ জানুয়ারি দেশে পৌঁছাবে বলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান জানিয়েছেন।

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় উপহারের ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসবে। সেখান থেকে নিয়ে টিকা রাখা হবে তেজগাঁওয়ে ইপিআইয়ের স্টোরেজে।

বাংলাদেশ সরকারিভাবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কিনছে। আর ভারত সরকার উপহার হিসেবে যে টিকা পাঠাচ্ছে, সেটাও সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, ভারতের উপহারের টিকা বুধবারই পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে। টিকা দেশে পৌঁছালে তিনি নিজে বিমানবন্দরে গিয়ে তা গ্রহণ করবেন। তবে টিকা পৌঁছাতে যে এক দিন দেরি হতে পারে, সেই আভাসও তিনি দিয়েছিলেন।

বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে টিকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আবদুল মান্নান বলেন, মঙ্গলবার কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কমিটির বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেনা টিকার প্রথম চালান ও উপহারের টিকা মিলিয়ে প্রথম মাসে আসবে ৭০ লাখ ডোজ। প্রতিদিন দুই লাখ ডোজ হিসেবে প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা তারা নিয়েছেন।

টিকা হাতে আসার পর ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় প্রথমে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে। ঢাকা মেডিকেল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে প্রাথমিকভাবে এই টিকা দেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য সেবা সচিব।

বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও দেশে এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না হওয়ায় গণটিকাদান শুরু করার আগ্ এই সংক্ষিপ্ত পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে।

আবদুল মান্নান বলেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকোটল অনুযায়ী এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা হবে। এরপর টিকা দেওয়া হবে সারাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

গণটিকাদান শুরুর আগে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন শুরু হবে। স্বাস্থ্যকর্মীসহ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা কর্মীরা সবার আগে টিকা পাবেন। প্রথম ডোজ দেওয়ার আট সপ্তাহ পর দিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ। টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাসভিত্তিক একটি বিতরণ তালিকাও ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।

তবে এখন পর্যন্ত সেরাম ইনস্টিটিউট ছাড়া আর কারও সাথে সরকারের চুক্তি হয়নি, অন্য কোনো টিকা বাংলাদেশে ব্যবহারের অনুমোদনও দেওয়া হয়নি।

আবদুল মান্নান বলেন, সরকারের কেনা ও ভারতের উপহারের টিকার বাইরে কোভ্যাক্সের আওতায় ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পাবে। সব মিলিয়ে এই টিকা দেওয়া যাবে ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষকে।

“দেশের অন্তত আট থেকে নয় কোটি মানুষকে যেন টিকা দেওয়া যায় সে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া যায়. তাহলে সে দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। আমাদের মাইক্রো প্ল্যানে এই ৮০ শতাংশ মানুষকেই টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।”

“তাই মোট ৫ কোটি ১০ লাখের মানুষের পরেও যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আরও টিকা আমদানি করা হবে। একইসঙ্গে আমি অত্যন্ত আশাবাদী, আগামী জুন জুলাইয়ের মধ্যে আমাদের দেশেই ভ্যাকসিন তৈরি হবে এবং এটা অ্যাভেইলেবল হয়ে যাবে।”