হুমায়ুন আজাদ হত্যামামলার যুক্তিতর্ক ‍শুনানি শুরু হল

লেখক-অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর শুরু হয়েছে

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2021, 04:04 PM
Updated : 18 Jan 2021, 04:04 PM

২০১৯ সনের মে মাসে এই শুনানি শুরুর কথা থাকলে মামলার অন্যতম আসামি মিনহাজ ওরফে মিজানের অভিযোগ গঠনের ধারার অর্থাৎ হত্যার বিষয়ে ৩০২ ধারার পরিবর্তনসহ আরও কয়েকটি জটিলতায় হাই কোর্ট ঘুরে এসে সোমবার তা শুরু হল।

ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাকছুদা পারভীনের আদালতে এদিন সুযোগ পেয়েই রাষ্ট্রপক্ষ যুক্ততর্ক শুনানি শেষ করে।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম হেলাল বলেন, “আমরা রাষট্রপক্ষ থেকে এ মামলার বিচারের  নানা রকমের চড়াই-উৎরাই  পার করে কীভাবে এ পর্যায়ে নিয়ে আসলাম,  তার ইতিহাস, রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপিত ৪১ জন সাক্ষীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে আসামিদের  সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করে শুনানি শেষ করেছি।”

মামলার মোট ৫ আসামির মধ্যে উপস্থিত দুই আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি সোমবারই শুরু করেন তাদের আইনজীবী ফারুক আহাম্মেদ।

এরপর শুনানি আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেন বিচারক।

এদিকে একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় এদিন সাবেক মহানগর হাকিম শফিক আনোয়ার ও কনস্টেবল রহিম আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত ২৩ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন।

হুমায়ুন আজাদ

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির রাতে বাংলা একাডেমির উল্টো পাশের ফুটপাতে আক্রান্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদ, যিনি তার লেখার জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তির হুমকি পেয়ে আসছিলেন। একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে জখম করা হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ওই হামলার ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা।

ইসলামী জঙ্গিরা হুমায়ুন আজাদের উপর ওই হামলা চালিয়েছিল বলে পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

এদিকে কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ২০০৪ সালের অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। ওই বছর ১২ অগাস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

হুমায়ুন আজাদের উপর হামলার পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছিলেন। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের পর সেই মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান মামলাটি তদন্তের পর ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

মো. মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন ওরফে হামিম ওরফে হাসিম, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু, সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ এবং হাফিজ মাহমুদ ওরফে রাকিব ওরফে রাসেলকে সেখানে আসামি করা হয়।

২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।

আসামিরা নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তাদের মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে আটক রয়েছেন। নূর মোহাম্মদ শুরু থেকেই পলাতক।

সালাহউদ্দিন সালেহীন ও হাফিজ মাহমুদ গ্রেপ্তার হলেও ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা। সালেহীন পালিয়ে যেতে পারলেও হাফেজ মাহমুদ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ওয়াজে বিষোদগার করা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে এ মামলার আসামি করা হলেও পরে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।