পার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে দল-মতের পার্থক্য ভুলে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বঙ্গভবন প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2021, 12:54 PM
Updated : 18 Jan 2021, 05:06 PM

নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুতে সোমবার জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্র চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।

“বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আসুন, দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।”

জাতীয় সংসদকে দেশের জনগণের ‘আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে বর্ণনা করে আবদুল হামিদ বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।

“গণতন্ত্রায়ন, সুশাসন ও নিরবচ্ছিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই।

প্রতিবারের মত এবারও মন্ত্রিসভার ঠিক করে দেওয়া ভাষণের সংক্ষিপ্তসার অধিবেশনে পড়েন রাষ্ট্রপতি।

কোনও সংসদের প্রথম এবং নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর একটি ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয়। পুরো অধিবেশনজুড়ে ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

বিকাল সাড়ে ৪টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।

অধিবেশন শুরুর পর শোক প্রস্তাব করা গ্রহণ হয়। এরপর সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন হয়।

প্রতিবার বছরের শুরু অধিবেশনের প্রথম দিন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সংসদে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার তা করা হয়নি।

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সংসদেরউত্তর প্লাজাদিয়ে সংসদ ভবনে ঢোকেন রাষ্ট্রপতি। স্পিকার রাষ্ট্রপতির আগমনের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্ভাষণ জানান।

সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতি ঢোকার পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। স্পিকারের ডান পাশে রাখা লাল রঙের গদিওয়ালা চেয়ারে তিনি আসন নেন।

স্পিকারের অনুরোধের পর রাষ্ট্রপতি তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন। এসময় তার মূল বক্তব্য ‘পঠিত’ বলে গণ্য করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিনকে অনুরোধ জানান আবদুল হামিদ। স্পিকারের আসনের বাম পাশে রাখা ‘রোস্ট্রামে’ দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন তিনি।

১৪৭ পৃষ্ঠার মূল ভাষণের সংক্ষিপ্তসারে রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন। এছাড়া দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সব ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো সাফল্যের সাথে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ।”

পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে ২ হাজার  চিকিৎসক ও ৫ হাজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার ৫২৫টি সাধারণ বেড, ৬৬৬টি আইসিইউ এবং ৭৩টি ডায়ালাইসিস বেড, ৫৫৪টি ভেন্টিলেটর, ১৩ হাজার ৫১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬৭৮ হাইফ্লো নেইজল ক্যানুলা এবং ৬৩৯টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের ব্যবস্থা রাখার কথা রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন।

তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি আশা করছি, সরকার খুব শিগগিরই দেশের জনগণকে কোভিড-১৯-এর টিকা প্রদান করতে পারবে।”

আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনায় সরকারের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাস মহামারিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক দুই-চার শতাংশে। তবে একইসময়ে মাথাপিছু জাতীয় আয় দশমিক এক-দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। আইএমএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা শীর্ষ দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

আসছে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ, এই মাহেন্দ্রক্ষণে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঝরে রাষ্ট্রপতির কণ্ঠে।

তিনি বলেন, “শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথেই আমাদেরকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। এ বছর মধ্যম-আয়ের দেশ হিসাবে আমরা ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ পালন করব। তবে আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া।

“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণমূলক, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সক্ষম হব।”