উপহার হিসেবেও টিকা পাঠাবে ভারত: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভারত থেকে উপহার হিসেবেও করোনাভাইরাসের টিকা পাবে বাংলাদেশ, যা শিগগিরই দেশে পৌঁছাবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2021, 08:38 AM
Updated : 18 Jan 2021, 01:18 PM

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ভারত থেকে উপহার হিসেবে আরও কিছু টিকা আসবে। এই উপহার হিসেবে কত টিকা আসছে সেই সংখ্যাটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে সংখ্যাটি ভালোই।”

বাংলাদেশ সরকারিভাবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কিনছে, যার প্রথম চালান ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে পৌঁছাবে বলে আশা করছে সরকার। 

সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড ছাড়াও ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন ভারত সরকার।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সোমবার মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

উপহার হিসেবে ভারত কোন কোম্পানির কী পরিমাণ টিকা বাংলাদেশকে পাঠাবে, তা জানাতে না পারলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, উপহার হিসেবে পাওয়া টিকা সরকারের কেনা টিকার প্রথম চালানের ‘আগেও’ দেশে চলে আসতে পারে।

“এটা যে কোনো দিন চলে আসবে। এটা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিষয় তো, এ কারণে সঠিক দিন-তারিখ এখনই বলতে চাই না। যখন আসবে তখন জানিয়ে দেব। কিন্তু আমরা আশা করছি, আমরা ভারত থেকে যে প্রথম লট পাব, তার আগেও চলে আসতে পারে।”

সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সরকারের করা চুক্তি অনুযায়ী, ওই তিন কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশ পাবে ছয় মাসের মধ্যে। বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার ‘ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা সরবরাহ করবে।

এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স এর আওতায় আরও আড়াই কোটি ডোজ টিকা আগামী জুনের মধ্যে বাংলাদেশ পাবে বলে সরকার আশা করছে।

সব কিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠ পর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকেই অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে।

টিকার প্রয়োগ সংক্রান্ত পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত জনগোষ্ঠীকে প্রথম ডোজ দেওয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হবে। টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাসভিত্তিক একটি বিতরণ তালিকাও তৈরি করা হয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।

তবে এখন পর্যন্ত সেরাম ইনস্টিটিউট ছাড়া আর কারও সাথে সরকারের চুক্তি হয়নি, অন্য কোনো টিকা বাংলাদেশে ব্যবহারের অনুমোদনও দেওয়া হয়নি।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা সবদিকেই খবর রাখছি। অক্সফোর্ড ছাড়াও ফাইজার, মডার্না, স্পুৎনিকসহ যেসব ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে সেগুলো আমরা আনার চেষ্টা করছি।”

সাংবাদিকদের ‘সবাই’ টিকা পাবেন জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় সবচেয়ে ঝুঁকি নিয়ে যারা কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে সাংবাদিকরা অন্যতম। আমরা জানি, অনেক সাংবাদিক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। এ কারণে টিকা এলে প্রত্যেক সাংবাদিক টিকা পাবেন।"

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান, ডিআরইউতে যেন একটি টিকাদান কেন্দ্র খোলা হয়। উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার আপাতত হাসপাতালগুলোতে টিকাদান কেন্দ্র চালু করবে।

“ভারতসহ কয়েকটি দেশে টিকাদান শুরু হয়েছে। আমরা সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, টিকার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে যেন তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া যায়, এ কারণে হাসপাতালে টিকাদান কেন্দ্র করা হচ্ছে।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।