আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বশরীরে তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে ডাক্তারি পরীক্ষার অসামঞ্জস্য প্রতিবেদন ও তদন্তে গাফিলতির বিষয় তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে তিন সদস্যের দুটি তদন্ত কমিটি করতে বলা হয়েছে। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেয়।
ওই মামলার আসামি ১১ বছর বয়সী শিশুর জামিন আবেদনের উপর শুনানিতে দাখিল করা নথিতে ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষার অসামঞ্জস্য প্রতিবেদন থাকায় এই আদেশ দিল উচ্চ আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী মো. শাহপরান চৌধুরী।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল সাংবাদিকদের বলেন, “মামলাটি বাতিল প্রশ্নে রুল জারির পাশাপাশি আদালত মামলাটির কার্যক্রমের তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।”
৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১১ বছরের (চিকিৎসা সনদ অনুযায়ী) আরেক শিশুর বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানায় মামলা হয়।
গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা এ মামলা করেন। মামলায় আসামির বয়স ১৫ বছর উল্লেখ করার পাশাপাশি বলা হয়, আসামি ৪ সেপ্টেম্বর তার শিশু মেয়েটিকে ধর্ষণ করে।
এক পর্যায়ে মামলার আসামি জামিন আবেদন করেন হাই কোর্টে। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট গত ৩ নভেম্বর আসামিকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়।
পাশাপাশি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মামলার সিডি (কেস ডকেট) ও তদন্ত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতেও দিতে বলা হয়।
গত বছর ২৩ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান সরকার আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় দোষীপত্র দেয়।
পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা ও নাসিরনগর থানার ওসিও হাই কোর্টে প্রতিবেদন দেয়।
ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে, ৫ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শিশুটিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
৬ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেওয়া চিকিৎসাপত্রে বলা হয়, তিন দিন আগে শিশুটি যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে।
৮ সেপ্টেম্বর শিশুটিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে হাই কোর্টে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তিনি শিশুটির চিকিৎসা সনদ সংগ্রহ করেন, যাতে চিকিৎসা কর্মকর্তা শোয়েব শাহরিয়ার উল্লেখ করেন ‘নো এক্সটার্নাল ফাইনডিং’।
একই দিনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের শিশুটির চিকিৎসা সনদপত্রের জন্য আবেদন করেন। সংগ্রহ করা সে চিকিৎসা সনদপত্রে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. একরামুল রেজা মতামত দেন যে শিশুটি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে।
এই ডাক্তারি পরীক্ষাটি হয় ৮ সেপ্টেম্বর, যেদিন শিশুটিকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর হাই কোর্টে দেওয়া আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসক মতামতের জায়গায় ভুলবশত ‘সেক্সুয়াল অ্যাসাল্ট উইদিন স্পেসিফিক টাইম’র জায়গায় ‘সেভেনটি টু আওয়ার্স’ লিখা হয়েছে।
এ প্রতিবেদন দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিঃশর্ত ক্ষমাও প্রার্থনা করেন আদালতের কাছে।
এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে হাই কোর্ট স্বপ্রণোদিত রুলসহ এ আদেশ দিল।