ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্য বিএডিসির

খাল খনন কর্মসূচির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার এখনকার তুলনায় তিন শতাংশ পয়েন্টের মত কমিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বিএডিসি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2021, 01:37 PM
Updated : 17 Jan 2021, 01:37 PM

রোববার ঢাকার সেচ ভবনে এক সেমিনারে বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়নে জরিপ ও পরিবীক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাফর উল্লাহ এ কথা জানান।

'ডিজিটালাইজেশন অব গ্রাউন্ড ওয়াটার মনিটরিং ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অব মাইনর ইরিগেশন' শীর্ষক এ সেমিনারের মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে দেশে সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার হচ্ছে ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশ, বাকিটা আসছে ভূগর্ভস্থ পানি থেকে।

“আগামী ২০২৫ সালে আমরা ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে এবং ২০৩০ সালে তা ৩০ শতাংশে উন্নীত করব। একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ২০২৫ সালে ৭১ দশমিক ৫ শতাংশে এবং ২০৩০ সালে ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনব।”

জাফর উল্লাহ জানান, ‘সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির ফলে’ গত ১০ বছরে ৯ হাজার ৪৫৭ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে; ১৩ হাজার ৩৫১ কিলোমিটার সেচ নালা স্থাপন করা হয়েছে। ১০টি রাবার ড্যাম ও ১টি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে।

ফলে সেচ এলাকার পরিমাণ ১০ দশমিক ৫০ লাখ হেক্টর বেড়ে ৫৬ দশমিক ২৭ লাখ হেক্টর হয়েছে। পাশাপাশি সেচ দক্ষতা ৩৫ শতাংশ থেকে ৩৮ শতাংশে এবং ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ২১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৭ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। সেচযোগ্য জমির ৭৩ শতাংশ সেচের আওতায় এসেছে।

বিএডিসি চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পানির টেকসই ব্যবহার ও পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে।

“নদী-খাল খনন ও পুনঃখনন, রাবার ড্যাম, জলাধার নির্মাণ, পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতির ব্যবহারসহ অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ফসল উৎপাদনে সেচের খরচ অনেক কমেছে; এটিকে আরো কমিয়ে আনতে উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।”

তিনি জানান, ২০৩০ সাল নাগাদ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সেচ এলাকা ৬০ লাখ হেক্টরে উন্নীত করার পাশাপাশি সেচ দক্ষতা ৩৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

সেমিনারে জানানো হয়, পানির টেকসই ব্যবহার ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৬৭-৬৮ সালে বিএডিসি প্রাথমিক পর্যায়ে কন্ট্যাক্ট গেজের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পরিমাপ শুরু করে।

সম্প্রতি ‘ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়নে জরিপ ও পরিবীক্ষণ ডিজিটালাইজেশনকরণ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ওয়াটার লেভেল ডেটা লগার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির অবস্থানচিত্র তৈরি এবং সময়ে সময়ে তা হালনাগাদ করা যাচ্ছে।

এছাড়া স্পেস টেকনোলজি ও রিমোট সেন্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ এবং জিআইএস এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে পানির স্তরের হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হচ্ছে।

সমুদ্র উপকূলবর্তী ৬০টি উপজেলায় স্যালাইনিটি ডেটা লগার স্থাপনের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ লবণ পানি পর্যবেক্ষণ এবং অনুপ্রবেশ পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে সেমিনারে জানানো হয়।

সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন সিজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল মজিদ।