শুক্রবার বিকেলে টিএসসি চত্বরে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে ‘ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাঁজর ভেঙ্গে টিএসসির উন্নয়ন চাই না’ শীর্ষক সভায় এ পরামর্শ দেওয়া হয়।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কবি-সাহিত্যক, স্থপতি ও সংস্কৃতি কর্মীসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও যুগের চাহিদা অনুযাযী টিএসসিকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গণপূর্ত অধিদপ্তর টিএসসিকে ভেঙে নতুন ভবনের খসড়া নকশাও করা হয়েছে।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, বাংলাদেশে উন্নয়ন বলতেই বোঝানো হয় বিল্ডিং নির্মাণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে আধুনিক যুগোপযোগী লাইব্রেরি-গবেষণাগার নির্মাণ করা যেত। তা না করে টিএসসিকে বহুতলা ভবনে রূপান্তর করা হচ্ছে।
টিএসসির সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “বিদ্যমান পরিস্থিতিতে টেএসসির ঘটনা নিয়ে একটা ডিসকোর্স তৈরি হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটা আমলে নেবেন বলে আমি মনে করি।
স্থপতি আল্লামা আল রাজী বলেন, উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো- প্রকৃতি ও পরিবেশের অবস্থানের সাথে মিলিয়ে উন্নয়ন ঘটানো। উন্নয়ন করতে হবে, তবে ইতিহাস-ঐতিহ্য ধ্বংস করে নয়, ইতিহাসের পায়ের চিহ্ন মুছে দিয়ে নয়।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক। এখানে যেসব ঐতিহাসিক সম্পদ আছে, সেগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।”
শিশু ও শিক্ষা রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা বলেন, টিএসসি অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের আঁতুরঘর। এই টিএসসিকে কেন্দ্র করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে।
তিনি বলেন, “আজকে এই টিএসসি নিয়ে শুধু আমাদের আবেগের জায়গাই নয়, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল সবারই আবেগ জড়ানো। এমনকি শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া বা এখানে যারা রাজনীতি করেছেন, সবারই আবেগ জড়িয়ে আছে এই টিএসসি। সেই অংশের যদি সংস্কার করতে হয়, তাহলে সবার মতামতের প্রতিফলন করতে হবে।”
সাবেক ছাত্রনেতা ও গল্পকার মাহমুদুল হক বলেন, “টিএসসির সংস্কার হতে পারে, কিন্তু এই স্থাপনার যাতে আমূল পরিবর্তন করা না হয়। আপনি এই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে ধ্বংস করে দিতে চান বা এর মাধ্যমে কী চান, এগুলোর সব কিছু পরিষ্কার করা দরকার।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, “গত কয়েক বছরে সারা দেশে এবং একইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানের জনপরিসরগুলোকে সংকুচিত করা হচ্ছে। মতবিনিময় ও চর্চার জায়গাগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
“আমাদের আশঙ্কা, প্রশাসন টিএসসির জনপরিসরকে সংকুচিত করে সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিবেশকে নষ্ট করতে চায়। বহুতল ভবন তৈরির মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক আদলে টিএসসিকে গড়ে তুলতে চায়। ছাত্র-শিক্ষকের স্বার্থে তা কতটুকু ব্যবহার হবে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।”
ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ঢাকা মহানগর ইনচার্জ সুস্মিতা রায় সুপ্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব কান্তি রায় ও সংস্কৃতি কর্মী ওয়ালিদ আশরাফ।