২৬ জানুয়ারি থেকে নিবন্ধন, টিকাদান ফেব্রুয়ারির শুরুতে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম চালান আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে আশা করছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2021, 10:42 AM
Updated : 11 Jan 2021, 03:04 PM

সব কিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠ পর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকেই অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে বলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম জানিয়েছেন।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বেক্সিমকো ফার্মা আমাদের জানিয়েছে, ২১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে পারবে। বিদেশে রপ্তানি করতে সেরাম ইনস্টিটিউটের যে আইন কানুন আছে তা সম্পন্ন করতে এই সময়টুকু লাগবে।"

খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশে আসার পর টিকা রাখা হবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যার হাউজে। কিছু কাগজপত্র ঠিক করে পরে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত স্থানে পাঠিয়ে দেবে।

“দেশের কোন কোন জায়গায় টিকা পৌঁছাতে হবে সেই তালিকা আমরা তাদের দেব। তারা সেসব জায়গায় টিকা পৌঁছে দেবে। জেলা শহরে পৌঁছে দেওয়ার পর আমাদের নিজস্ব সক্ষমতায় টিকা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় টিকা পৌঁছানো হবে।”

অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, টিকা আসার পর কোনো মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। এরপর এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ শেষে মাঠ পর্যায়ে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হবে।

“টিকাটা যেহেতু প্রথম বাংলাদেশে আসছে, সে কারণে আমরা দুয়েকটা জায়গায় অল্প কিছু মানুষের ওপর টিকা দেব। সেটা মেডিকেল কলেজ হতে পারে, অথবা হাসপাতালও হতে পারে। সেখানে ভ্যাকসিনেটর বা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যদি কেউ টিকা নিতে চান, তাদের ওপর প্রয়োগ করা হবে।

“টিকা দেওয়ার পর সাত দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। এরপর ফিল্ডে কাজ শুরু করে দেব। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় পর্যায়ে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে।”

অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত নভেম্বরে যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।

বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার ‘ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা সরবরাহ করবে।

অক্সফোর্ডের তৈরি এই টিকা প্রত্যেককে দুই ডোজ করে দিতে হয়। সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল, প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকার অর্ধেক ২৫ লাখ মানুষকে দিয়ে তাদের জন্য বাকি টিকা সংরক্ষণ করা হবে।

তবে সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার নতুন তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। সে কারণে প্রথম চালানে পাওয়া টিকা প্রথম মাসেই একসাথে ৫০ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে।

"বেক্সিমকো এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে আমরা যে তথ্য জেনেছি, তাতে প্রথম ডোজের পর দুই মাস সময় পাব দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে আমরা গতকাল (রোববার) আ্মাদের মূল পরিকল্পনা কিছুটা সংশোধন করেছি। এখন ৫০ লাখ ডোজই দিয়ে দেব। কারণ দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য আমরা ৮ সপ্তাহ সময় পাব। এর মধ্যে টিকার আরও চালান চলে আসবে। এভাবে আমরা বেশি সংখ্যক মানুষকে দ্রুত টিকা দিতে পারব।"

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা।

এই টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ডা. মো. শামসুল হক পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সময় পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, হালকা জ্বর ভাব, যেখানে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে সেখানে ব্যথা এবং মাথা ঝিমঝিম করা, বমি ভাবের কথা জানা গেছে। তবে এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের দুই থেকে তিন শতাংশের মধ্যে।

যে কোনো টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, টিকাদান পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুতি রেখেছেন।

“এটাকে আমরা বলি আফটার ইফেক্ট ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন। বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার সময় এনাফাইলেক্সিস বলে একটা কথা আছে, এটা মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু এনাফাইলেক্সিসেরও ধরন আছে। এজন্য যারা টিকা দেবে, তাদের প্রশিক্ষণের সময় এ বিষয়টা অবহিত করা হবে।

“এটা ঘটলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে জানাবে। আমাদের কেন্দ্রভিত্তিক প্রয়োজনীয় মেডিকেল টিম, কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ থাকবে। কারও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, টিকা ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করবেন।

“আমাদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে। টিকা ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো পর্যন্ত যে ধরনের নিরাপত্তা তারা দেবেন।”

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে যেন কোনো ধরনের বিভ্রান্তি না হয়, সেজন্য ভূমিকা রাখতে সাংবাদিদের প্রতি অনুরোধ জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ও অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, এমআইএস শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।