টিকায় প্রতিবেশীরাও অগ্রাধিকার পাবে: দোরাইস্বামী

ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকার ক্ষেত্রে তার দেশের মানুষের পাশাপাশি প্রতিবেশীদেরও ‘অগ্রাধিকার’ দেবে তার দেশের সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2021, 10:27 AM
Updated : 7 Jan 2021, 10:27 AM

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাই কমিশনার এ কথা বলেন।

কবে নাগাদ বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের টিকা পেতে পারে- এ প্রশ্নে হাই কমিশনার বলেন, “ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ওষুধ মন্ত্রণালয়- তাদের কেউ টিকা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বলেনি, কেউ বলেনি যে রফতানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।  

“আমরা বারবার বলে আসছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- আমাদের ভ্যাকসিন মানবতার জন্য ব্যবহৃত হবে। আমাদের জন্য আমাদের অগ্রাধিকার ভারত, আমাদের নিজের লোকেরা অবশ্যই এবং আমাদের প্রতিবেশীরা। এর বাইরে আর কী আশ্বাস আমরা দিতে পারি।”

বিশ্বে প্রতিবছর যত টিকা উৎপাদন হয়, তার ৬০ শতাংশের মত তৈরি হয় ভারতে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশই ভারত থেকে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম চালান পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করেছে, তার উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া।

সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত টিকার সঙ্গে ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকাও জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য ভারতের ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে।

সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত নভেম্বরই চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সোমবার এই টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোভিশিল্ড ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের।

কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালার বরাত দিয়ে রোববার রাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রপ্তানি শুরুর আগে আগামী দুই মাস তারা ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেই জোর দেবে।

ওই খবরে নেপাল ও বাংলাদেশের মত প্রতিবেশী দেশগুলোতে টিকা পাওয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান সোমবার দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন।

বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ভারতের একাধিক সংস্থা ভ্যাকসিন উত্পাদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং তাদের টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ দেওয়া হয়নি।

“বাকিটা নির্ভর করে কতটা ভ্যাকসিন তারা উৎপাদন করতে পারে তার ওপর। এটা এমন বিষয় না যা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না বা কেউ এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটা একেবারেই সাধারণভাবে উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে। কোম্পানি যত বেশি উৎপাদন করতে পারবে, তত বেশি তারা রপ্তানি করতে পারবে।”

দোরাইস্বামী বলেন, এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। 

“সরবরাহটা শুরু হতে দিন, তিনি টিকার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কোম্পানিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ভারত সরকারকে টিকা দেবে। তাদের উৎপাদন আর বিতরণের কাজটা শুরু করতে দিন।”

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “ভারত আমাদের অনেক ভালো প্রতিবেশী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক একটা ডিফারেন্ট হাইটে চলে গেছে। সব সময় আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি, সেটা করছি।”

হাই কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। আমাদের ভূমি মন্ত্রণালয়ের রিফর্মগুলো জানতে চেয়েছেন। ভারত অনেক আগে এ ধরনের রিফর্মে হাত দিয়েছে।

“আমাদের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজটালাইজেশন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কীভাবে আরো সহযোগিতা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”