বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা সব দিক থেকে চেষ্টা করছি, আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা যেখানে যাওয়া প্রয়োজন সেখানে যাচ্ছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন, একটা ফর্মুলা দিয়েছেন।
“আমি নিজে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছেন, আমাদের বর্ডার গার্ড লেভেলে আলোচনা চলছে। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসেছেন। সবই হচ্ছে, কিন্তু তারপরও রেজাল্ট হচ্ছে না এটাই আমি বলছি।”
মিয়ানমার তার প্রতিশ্রুতি রাখছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা (মিয়ানমার) অনেক কিছু কমিটমেন্ট করেছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সেজন্যই আমরা বলছি, তারা যেগুলো বলছে সেগুলো করার জন্য আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
“ইতোমধ্যে তিনি তিনটি দেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন, সেটাও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সভায় জানিয়েছেন।”
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। তারা যেন নিরাপত্তা, মর্যাদা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে স্বভূমিতে ফিরতে পারে সেই বন্দোবস্ত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
মিয়ানমার সরকার প্রতিশ্রুতি না রাখায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যেখানে যে ফোরাম আছে আমাদের সরকার সে ফোরামকে জানাচ্ছে এবং সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমনকি ওআইসির এক সদস্য জাম্বিয়া মামলাও করেছেন। সে মামলাও চলছে এবং সব কিছুই চলমান রয়েছে, কোনো প্রচেষ্টাই বাদ থাকবে না।”
সভায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গারা কী অবস্থায় আছে এবং কীভাবে তারা যাবে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান আসাদুজ্জামান কামাল।
তিনি বলেন, “অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সভায়। ক্যাম্পগুলোর চারিদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল। যাতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকরা যত্রতত্র যাতায়াত করতে না পারে। তারাও যাতে ‘অন্য রকম’ পরিস্থিতিতে না পড়ে সেজন্যই কাঁটাতারের ব্যবস্থা।
“শুধু কাঁটাতারের বেড়া নয়, সেখানে হাঁটার রাস্তা থাকবে, টাওয়ার থাকবে, সিসি ক্যামেরা থাকবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কাঁটাতারের বেড়া ও ওয়াক ওয়ের কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় দুটি এপিবিএন ব্যাটালিয়ন তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে মাদককে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ক্যাম্পগুলোতে দেখা যায়, যারা অবস্থান করছেন তারা মাঝে মাঝে মিয়ানমারে চলে যাচ্ছেন। সেখান থেকে ইয়াবা নামক মাদক এনে এবং লাভ-লোকসানের বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি এমনকি কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
“এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য দিনে-রাতে টহল আরও জোরদার করা হচ্ছে।”
ভাসানচরে এখন উৎসুক জনতা যাওয়ার চেষ্টা করছে জানিয়ে সবাইকে এ বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৮০টি এনজিও কাজ করছে। আর ভাসানচরে ইতোমধ্যে ২২টি এনজিও কাজ শুরু করেছে।
তিনি জানান, কক্সবাজার ক্যাম্পে ১৩৪টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র রয়েছে এবং ৫ হাজার ৪৯৫টি শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ইংরেজি এবং মিয়ানমারের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়।
মন্ত্রী বলেন, “আমরা মনে করি, আমাদের মূল কাজ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়া। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য যা যা করণীয় সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।”
সভায় পরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, জননিরাপত্তা সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।