যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িতে স্থিতাবস্থা জারি

চট্টগ্রাম নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির দখল ও অবস্থানের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2021, 09:15 AM
Updated : 6 Jan 2021, 09:15 AM

অর্থাৎ, শিশুবাগ স্কুল হিসেবে পরিচিত ওই বাড়ি যে অবস্থায় আছে, ঠিক সে অবস্থাতেই থাকবে। 

জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান এম এম আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

আইনজীবী আজিম পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত রুল জারি করে বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন, রুলের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত বাড়িটিতে স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ রাখা হয়েছে।”

যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষণ করার ব্যর্থতাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ওই স্থাপনাকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

সংস্কৃতি সচিব, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ ছয়জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

দৈনিক আজাদীতে মঙ্গলবার ‘শিশু বাগ স্কুলের ভবন ভাঙ্গা নিয়ে উত্তেজনা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাসুদ আলম চৌধুরী বুধবার এ রিট করেন।

আদালতের আদেশের কথা বলে সোমবার এক ব্যক্তি বুলডোজার নিয়ে এসে যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি ভেঙে ফেলতে উদ্যত হয়।

জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে ওই ভবনে এখন শিশুবাগ স্কুলের কার্যক্রম চলছে। আদালতের আদেশের কথা বলে সোমবার এক ব্যক্তি বুলডোজার নিয়ে সদলবলে এসে বাড়িটি ভেঙে ফেলতে উদ্যত হন।

তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি রক্ষা পায়।

ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। চট্টগ্রামের এই আইনজীবীর ছেলে হলেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত।

ব্যারিস্টার যতীন্দ্রমোহনও ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। তিনি কলকাতার মেয়রও হয়েছিলেন। ইংরেজ স্ত্রী নেলী সেনগুপ্তাকে নিয়ে কিছু দিন ভবনটিতে ছিলেন তিনি।

আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র বসু, শরৎ বসু, মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময় এই বাড়িতে এসেছিলেন।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবীরাও এই বাড়ির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সূর্য সেন, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তীর হয়ে মামলা লড়েছিলেন যতীন্দ্রমোহন। এতে ব্রিটিশ শাসকদের রোষানলে পড়ে ১৯৩৩ সালে কারাগারে মৃত্যু হয়েছিল যতীন্দ্রমোহনের।

এরপর নেলী সেনগুপ্তা ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রহমতগঞ্জের বাড়িটিতে ছিলেন। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ফিরে দেখেন বাড়িটি বেদখল হয়ে গেছে।

১৯ গণ্ডা এক কড়া পরিমাণ জমিটি পরে শত্রু সম্পত্তি ঘোষিত হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি জমিটি লিজ বা ইজারা নিয়ে ‘বাংলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন সেখানে।

১৯৭৫ এর পর নাম বদলে সেই ভবনে ‘শিশুবাগ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইছহাকের সন্তানরা স্কুলটি পরিচালনা করছেন।