এটা জিটুজি নয়, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি: বেক্সিমকোর এমডি

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনাভাইরাসের টিকা আনতে যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে, সেটি একটি ‘বাণিজ্যিক চুক্তি’, সরকারের সঙ্গে সরকারের ‘চুক্তি নয়’ বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2021, 03:26 PM
Updated : 4 Jan 2021, 03:27 PM

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’। সরকার সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে যে চুক্তি করেছে, তা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসই সরবরাহ করবে।

ভারত টিকা রপ্তানিতে ‘নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে’- এমন খবরে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার বিকালে গুলশানে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন সাংসদ নাজমুল হাসান।

তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ‘নির্ধারিত সময়েই’ বাংলাদেশ টিকা পাবে, দেরি হওয়ার কোনো ইংগিত তারা সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে পাননি।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করেছে, তার উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গ যুক্ত রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া।

কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউট।

ভারতের ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা রোববার কোভিশিল্ডের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিলে বাংলাদেশেও দ্রুত টিকা পাওয়ার আশা জোরালো হয়ে ওঠে।

কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালা পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রপ্তানি শুরুর আগে আগামী দুই মাস তারা ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেই জোর দেবেন।

তার ওই বক্তব্যের ভিত্তিতে একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, টিকা রপ্তানিতে ‘নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে’ ভারত। ওই খবরে বাংলাদেশের টিকা পাওয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়।

এই প্রেক্ষাপটে দুপুরে এ সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেন, “আমি এখনই (দুপুরে) ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনরাকে ফোন করলাম। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, আমরা যে চুক্তি করেছি,... এটার ফাইনানশিয়াল ট্রানজেকশন, কীভাবে টাকাটা যাবে, কীভাবে ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে- সেসব কাজ হয়েছে জিটুজি বা সরকার টু সরকার। যে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার কথা ভারত সরকার বলেছে শুধুমাত্র কর্মাশিয়াল অ্যাকটিভিটিজের ওপর, আমাদেরগুলোর ওপর না। কারণ আমাদেরটা সরকার টু সরকার।”

সচিবের ওই বক্তব্য নিয়ে বিকালে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।

উত্তরে তিনি বলেন, “এখানে জিটুজির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমার জানা নাই। এইটা আপনারা যে জিটুজির কথা বলছেন স্বাস্থ্যসচিব যেটা বলেছেন… উনি কোন ভ্যাকসিনের কথা বলছেন আমি জানি না। এটা হতে পারে অন্য ভ্যাকসিন, সরকার অন্য কোম্পানির সঙ্গে থাকতেই পারে… আমার জানা নাই।

“এখানে বেক্সিমকো ফার্মাও গভার্নমেন্ট না, সেরাম ইনস্টিটিউটও গভার্নমেন্ট না। একদম ক্লিয়ার, কাজেই এখানে গভার্নমেন্ট টু গভার্নমেন্ট কীভাবে হতে পারে? এটা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি।”

নাজমুল হাসান বলেন, তার কোম্পানি সোমবারও সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কথা বলেছে। চুক্তি অনুযায়ীই তারা বাংলাদেশকে টিকা দেবে।

“ওদের কাছ থেকে আমরা কোনো ধরেনর নেতিবাচক কথা শুনিনি। আমার ধারণা কেউ কোনো ভুল করছে। এখানে কোথাও বলা হয়নি এক্সপোর্ট করা যাবে না। নিউজটা আমিও শুনেছি।

“সত্যি কথা বলতে কি, আমি বা আমরা এটা নিয়ে অতটা চিন্তিত না। কারণ আমার এগ্রিমেন্টটা হয়ে গেছে। ওই চুক্তিতে ক্লিয়ারকাট বলা আছে, আমাদের দেশে অ্যাপ্রুভাল দেওয়ার এক মাসের মধ্যে তারা আমাদের টিকা পাঠাবে।”

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, চুক্তি যেহেতু আগেই হয়ে গেছে, এটাতে সমস্যা হওয়ার কোনো কারণ নাই। এটা নিয়ে আমি আজকেও সেরামের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকেও আমরা এমন কোনো ইন্ডিকেশন বা কিছু পাইনি যে এটা দেরি হতে পারে।”

নাজমুল হাসান বলেন, এখন সরকারের সামনে দুটো কাজ, যত দ্রুত সম্ভব এই টিকার অনুমোদন দেওয়া এবং দ্রুত টাকা পাঠিয়ে দেওয়া। অনুমোদনের জন্য বেক্সিমকো সোমবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করেছে।

“আমরা আমাদের ব্যাংক গ্যারান্টি সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। ব্যাংক গ্যারান্টি পাওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের এটা পৌঁছে দিতে হবে। আরেকটা হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন, যেটা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেবে। আমরা ডকুমেন্টস সব আগেই জমা দিয়েছি। আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছি।”

দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, ওই তিন কোটি ডোজ টিকার জন্য অগ্রিম হিসেবে ৬০০ কোটি টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

আর ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বেক্সিমকো, ফরেন মিনিস্ট্রি ও ভারতের মিশনের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, আমাদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তি ব্যাহত হবে না। কোনো সমস্যা হবে না, আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”

আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কাছে আপডেট এসেছে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে যে, ভারত আমাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক যে চুক্তি করেছে, সেটা বাস্তবায়ন হবে।

“ওরা বলেছেন যে, টিকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যেহেতু সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে আলাপ করেই এটা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রথম টিকা পাবে। সুতরাং কোনো ধরনের ব্যান এটার উপরে হবে না। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নাই। উনারা বলেছেন যে, বাংলাদেশ মাস্ট নট বি কনসার্নড।”