দুই মামলায় ইরফানের 'অব্যাহতি' চেয়ে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন

সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক মামলায় আদালতে ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ দাখিল করে তার অব্যাহতি চেয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদককামাল হোসেন তালুকদার, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2021, 11:06 AM
Updated : 4 Jan 2021, 11:48 AM

চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “মামলা দুটির ফাইনাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'মিসটেক অব ফ্যাক্টস'। অর্থাৎ, তথ্যগত ভুল ছিল। সে কারণে এ প্রতিবেদন দিয়ে আসামির অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে।”

তবে ইরফানের দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লার বিরুদ্ধে হওয়া অস্ত্র ও মাদক আইনের অন্য দুটি মামলায় অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় তাকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি।

ইরফান সেলিম ও জাহিদুল মোল্লার বিরুদ্ধে ওই চারটি মামলা দায়ের করেছিলেন র‌্যাব-৩ এর ডিএডি মো. কাইয়ুম ইসলাম।

তদন্ত শেষে সোমবার ইরফান সেলিমের দুই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন এবং জাহিদ মোল্লার দুই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয় বলে জানান ওসি।

তদন্তের দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  জাহিদ মোল্লার  কোমর থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয় এবং সঙ্গে ৪০৬টি ইয়াবা পাওয়া যায়।

আর ইরফান সেলিমের মামলার এজাহারে বলা হয়, তাদের বাড়ির চারতলার একটি কক্ষ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয় এবং অন্য একটি কক্ষ থেকে বিয়ার ও মদ উদ্ধার করা হয়।

“এখানে তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়নি যে, আগ্নেয়াস্ত্রটি ইরফান সেলিমের এবং মাদক ও মদ তার।”

ওই আগ্নেয়াস্ত্র তাহলে কার- সেই প্রশ্নে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “যে কক্ষ থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার দেখানো হয়েছে; সেই কক্ষে অনেক মানুষ যাতায়াত করে। ওই অবৈধ অস্ত্রটি কার তা তদন্ত করে বের করা যায়নি।”

নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় গতবছর নতুন করে আলোচনায় আসেন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ও তার ছেলে ইরফান সেলিম, যিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন।

গত ২৪ অক্টোবর রাতে ধানমণ্ডি এলাকায় সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো হাজী সেলিমের একটি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওয়াসিফ।

পরদিন ২৫ অক্টোবর পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটের দেবীদাস লেইনে হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান চালায় র‌্যাব। আটক করা হয় ইরফান ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে।

ওই ভবন থেকে দুটি অবৈধ পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৭টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া এবং বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করার কথা সে সময় র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

মদ আর ওয়াকিটকির জন্য ইরফান ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে তাৎক্ষণিকভাবে ছয় মাস করে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

দেবীদাস লেইনে ওই অভিযানের মধ্যেই চকবাজারের আশিক টাওয়ারে ইরফানের ‘নির্যাতন কেন্দ্রের’ সন্ধান পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব। 

পরে ইরফান সেলিমকে কারাগারে পাঠানো হয়। অস্ত্র ও মাদক আইনে আলাদা মামলা দায়ের করা হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পদ থেকেও বরখাস্ত হন তিনি।

র‌্যাবের ওই অভিযানের পর রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় হাজী সেলিমের ‘দখলদারিত্বের’ খবর আসতে থাকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয় তারাও হাজী সেলিমের ‘অবৈধ সম্পদ’ অনুসন্ধানে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।

ইরফান ও তার দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে দায়ের করা র‌্যাবের মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুরান ঢাকায় ইরফানদের বাড়িতে সেই অভিযান চালানো হয়। ভবনের চতুর্থ তলা থেকে জাহিদুল মোল্লাকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৪০৬টি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

আর চতুর্থ তলার অপর একটি কক্ষ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল এবং ইরফান সেলিমের কক্ষ থেকে ১২টি বিয়ারের ক্যান উদ্ধার করা হয়।

চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, “প্রতিটি মামলায় চার পৃষ্ঠা করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। দুটি ফাইনাল রিপোর্ট ও দুটি চার্জশিট। সবকিছুই বিশ্লেষণ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।”