২০২০: সাড়া ফেলা যত অভিযান

ভাইরাস যখন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, তখনও অপরাধ থামেনি; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি অভিযান আর প্রতারণা-জালিয়াতির কয়েকটি ঘটনা বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে বিদায়ী বছরে।

তাবারুল হক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2020, 06:34 PM
Updated : 29 Dec 2020, 05:47 AM

লকডাউনের মধ্যে দুই মাস চুরি-রাহাজানির মত অপরাধ কমে আসার খবর এসেছিল সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু পরে তা ছাপিয়ে গেছে পারিবারিক সহিংসতা আর ধর্ষণ-নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার খবর।

আগের বছরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তাদের বিচারের কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে মহামারীর কারণে। তবে এর মধ্যেও প্রকাশ হয়েছে নতুন নতুন চরিত্রের নতুন অপরাধের খবর।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর আগেই ওয়েস্টিন হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিয়ে কয়েকজন তরুণীকে দিয়ে ‘যৌন ব্যবসা’ চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে আলোচনায় আসেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) শামীমা নূর পাপিয়া।

এরপর মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও পরীক্ষার নামে জালিয়াতির ঘটনায় রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি হেলথ কেয়ার ও সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান নিয়ে দেশে তোলপাড় হয়।

আর বছরের শেষভাগে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় পুরান ঢাকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের গ্রেপ্তার, উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও বাড্ডায় ‘গোল্ডেন মনিরের’ বাড়িতে র্যাবের অভিযান ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।

আদালতে শামিমা নূর পাপিয়া

পাপিয়ার কারবার

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনকে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে ঢাকা ও নরসিংদীতে পাপিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানানো হয়।

ওই সময় র্যাবের তরফ থেকে বলা হয়, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটির টাকার উপরে।

গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে জাল নোটের একটি এবং অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে র্যাব। আর মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে সিআইডি আরেকটি মামলা করে।

এরপর দুদকও পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামে। ৪ অগাস্ট পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে ছয় কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে মামলা করে দুদক।

এরই মধ্যে অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও সুমনের ২০ বছরের সাজার রায় হয়েছে।

আদালতে জেকেজি হেলথকেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ

কোভিড-১৯ সনদ জালিয়াতি, রিজেন্ট-জেকেজিতে অভিযান

করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেই ভুয়া কোভিড-১৯ সনদ দেয়া এবং চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে আটকা পড়েন রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্তাব্যক্তিরা। বাতিল করা হয় দুটি প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাস চিকিৎসা ও পরীক্ষার অনুমোদন।

লাইসেন্স না থাকার পরও ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল হিসেবে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করার কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদ এবং জেকেজির চেয়ারম্যান জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক সাবরিনা শারমিন হুসাইন ও তার স্বামী জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরী।

করোনাভাইরাস বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ব্যবস্থাপনার চরম ঘাটতি ছিল। তাদের মধ্যে দুর্নীতির মনোভাব ছিল। যে কারণে এমন মহামারীর মধ্যেও মানুষের স্বাস্থ্য সেবার নাম করে জালিয়াতি ও প্রতারাণা করতে পেরেছে তারা।”

মার্চে করোনাভাইরাসরে প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নেয় জেকেজি। কিন্তু পরে জানা যায়, রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরীক্ষা না করে রোগীদের ভুয়া সনদ দিচ্ছিল তারা।

এসব অভিযোগে ২২ জুন জেকেজির দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে গ্রেপ্তর করা হয় আরিফুল ও সাবরিনাকে। এরপর করোনাভাইরাসের ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে আট কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান

গ্রেপ্তারের পর রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ

রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আরও বেশি। বিনামূল্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল তারা। কিন্তু তারা নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দিচ্ছিল এং সরকারের কাছে বিল নেওয়ার পর রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নিচ্ছিল।

এসব অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে ৬, ৭ ও ৮ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয় র্যাব। সে সময় আটজনকে আটক করা হয়।

ওই অভিযানের গা-ঢাকা দেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম, যিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নানা কাজ হাসিল করে আসছিলেন।

১৫ জুলাই সাতক্ষীরা দেবহাটা সীমান্তবর্তী কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর থেকে পিস্তলসহ তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।

পরে তার বিরুদ্ধে আসতে থাকে প্রতারণা নানা অভিযোগ। এর মধ্যে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে পুলিশের করা এক মামলায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাহেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

অনুমোদন না নিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার অভিযোগে গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব

সাহাবউদ্দিন মেডিকেলে অভিযান

রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতি উন্মোচনের পর করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেওয়াসহ নানা অনিয়ম পেয়ে ১৯ জুলাই গুলশানের সাহাবউদ্দিন মেডিকেলে যায় র‌্যাব।

সে সময় বলা হয়, অনুমোদন না থাকলেও করোনাভাইরাসের র‌্যাপিড টেস্ট করছিল সাহাবউদ্দিন মেডিকেল। আবার পরীক্ষা ছাড়াই ‘ভুয়া প্রতিবেদন’ দিচ্ছিল। করোনাভাইরাস নেগেটিভ রোগীকে পজিটিভ দেখিয়ে ভর্তি করা ছাড়াও ভিন্ন ল্যাব থেকে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নিজেদের প্যাডে প্রতিবেদন দিচ্ছিল তারা। 

লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর আগে উত্তীর্ণ হলেও তা নবায়ন না করেই কাজ চালিয়ে আসছিল ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযানে হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে ১০ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী ও ওষুধ পাওয়া যায়।

ওই অভিযানের পর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল হাসনাতকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সল আল ইসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়।

মাস্ক কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার হন জেএমআই গ্রুপের এমডি আব্দুর রাজ্জাক

মাস্ক কেলেঙ্কারি

দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত মার্চে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০ লাখ মাস্ক সরবরাহ করতে জেএমআই হাসপাতাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডকে কার্যাদেশ দিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সে সময় এন-৯৫ মাস্কের বাক্সে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক পাওয়া গেলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

চিকিৎসক, নার্সসহ চিকিৎসাকর্মীদের ‘মৃত্যুর ঝুঁকিতে’ ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে জেএমআই গ্রুপের এমডি মো. আব্দুর রাজ্জাকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলার পর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি উচ্চ আদালতে জামিন পান।

মদ আর ওয়াকিটকি রাখায় ইরফান সেলিমকে তাৎক্ষণিকভাবে কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত

ছেলের কাণ্ডে বিপাকে হাজী সেলিম

নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় এ বছর নতুন করে আলোচনায় আসেন পুরান ঢাকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ও তার ছেলে ইরফান সেলিম।

গত ২৪ অক্টোবর রাতে ধানমণ্ডি এলাকায় সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো হাজী সেলিমের একটি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওয়াসিফ।

পরদিন ২৫ অক্টোবর পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটের দেবীদাস লেইনে হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান চালায় র‌্যাব। আটক করা হয় ইরফান ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে।

ওই ভবন থেকে দুটি অবৈধ পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৭টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া এবং বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করার কথা জানায় র‌্যাব।

মদ আর ওয়াকিটকির জন্য ইরফান ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে তাৎক্ষণিকভাবে ছয় মাস করে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

দেবীদাস লেইনে ওই অভিযানের মধ্যেই চকবাজারের আশিক টাওয়ারে ইরফানের ‘নির্যাতন কেন্দ্রের’ সন্ধান পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব। 

পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিমকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পদ থেকেও বরখাস্ত হন তিনি।

র‌্যাবের ওই অভিযানের পর রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় হাজী সেলিমের ‘দখলদারিত্বের’ খবর আসতে থাকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয় তারাও হাজী সেলিমের ‘অবৈধ সম্পদ’ অনুসন্ধানে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।

‘গোল্ডেন মনিরের’ বাড়িতে র‌্যাবের অভিযান

র‌্যাবের জালে গোল্ডেন মনির

বিপুল অর্থ, অস্ত্র-মদ ও সোনাসহ গত ২০ নভেম্বর রাতে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হন মনির হোসেন, যিনি ‘গোল্ডেন মনির’ নামেই পরিচিত।

রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় মনিরের ছয়তলা বাড়িতে অভিযানের পর এক কোটি নয় লাখ টাকা, চার লিটার মদ, আট কেজি সোনা, একটি বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করার কথা জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

গ্রেপ্তারের পর মনিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা হয়। মামলাগুলো তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

তার বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগে পুরনো একটি মামলার তদন্ত এবং একই অভিযোগে আরেকটি অনুসন্ধান চালানোর কথা জানায় দুর্নীতি দমন কমিশন। এর মধ্যে আট বছর আগের ওই অবৈধ সম্পদের মামলায় গত ৩ ডিসেম্বর মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করে কমিশন।

এছাড়া নতুন অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে মনিরের ৬১০ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুদক।

কক্সবাজারে তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর থমকে গেছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনা।

সিনহা হত্যার পর কমল বিচারবহির্ভূত হত্যা

প্রতিবছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা থাকে একটি আলোচিত বিষয়। এ বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর পর ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা হঠাৎ কমে আসার বিষয়টি সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। 

ওই ঘটনায় সিনহার বোনের দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে র‌্যাব। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলিসহ ১৫ জনকে সেখানে আসামি করা হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে।

কিন্তু পুলিশের দেওয়া ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২ অগাস্ট উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যার’ অভিযোগগুলোও নতুন করে আলোচনায় আসতে শুরু থাকে।

তদন্ত শেষে বলা হয়, ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ‘ইয়াবা কারবারের খবর জেনে যাওয়ায়’ সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ হত্যা করা হয় সেই রাতে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’ যেখানে ১৮৪ জনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে এসেছে, সেখানে অগাস্ট মাসে ঘটেছে মাত্র একটি ঘটনা।

সেপ্টেম্বরে ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধে কারও মৃত্যু হয়নি। অক্টোবর আর নভেম্বরে নিহত হয়েছেন একজন করে। 

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মহাসচিব নূর খান লিটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত লক্ষ্য করলে দেখা যায়, যেসব ঘটনায় মানুষের মনে আলোড়ন তৈরি করেছে, মানুষের ক্ষোভের সরাসরি বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তেমন ঘটনার পর সাধারণত এই ধরনের হত্যাকাণ্ড কিছুদিনের জন্য কমে আসে। কিন্তু পরে এ ধরনের ঘটনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।

“তাই সিনহা হত্যার পর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমে এসেছে বলে আর যে আর হবে না, তেমন কিছু বলার সময় এখনও আসেনি। সিনহা হত্যার পরেও বেশ কয়েকটি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে।”

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেয়া পরিসংখ্যানভিত্তিক তথ্য উপাত্তের ব্যাপারে র‍্যাব ওয়াকিবহাল নয় বলে জানান তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এবং মিডিয়া উইংয়ের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সদস্যরা আইনগত এখতিয়ারের মধ্যে থেকে যেন কর্মসম্পাদন করে, তার ওপর সবসময় জোর দিই আমরা। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার সময় কখনও কখনও এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যখন পুলিশকে আইনগত নির্দেশনার মধ্যে থেকেই বলপ্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে হয়।

"যাই হোক, যদি আইন-লঙ্ঘনের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে, তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন মেহেরুন নাহার মেঘলা]