সীমান্ত সম্মেলন: মিজোরামে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা নিয়ে’ বিজিবির উদ্বেগ

ভারতের মিজোরাম রাজ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটির’ অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2020, 11:33 AM
Updated : 25 Dec 2020, 11:33 AM

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম ভারতের গৌহাটিতে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশের এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।

সম্মেলন শেষে শুক্রবার বিজিবির পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “বিজিবি মহাপরিচালক ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য অনুরোধ করেন।

“সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতির’ কথা উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক ওইসব আস্তানার (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।”

গত ২২ ডিসেম্বর গৌহাটিতে শুরু হওয়া এবারের সীমান্ত সম্মেলনে ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি মহাপরিচালক। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও ছিলেন এই দলে।

অন্যদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ভারতের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ সম্মেলনে অংশ নেয়।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সীমান্তে জনসচেতনতা কর্মসূচি জোরদার, দুর্গম অঞ্চলে যথাযথ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, চোরাকারবারীদের ব্যাপারে যৌথ অভিযান পরিচালনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্মেলনে দুই পক্ষ একমত হয়েছে।

“বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক/দুর্বৃত্ত কর্তৃক বাংলাদেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা/আহত/মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অধিক কার্যকরী উদ্যোগ হিসেবে সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাসমূহে রাত্রিকালীন যৌথ টহল পরিচালনার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।”

গৌহাটিতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম ও বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা। ছবি: বিজিবি

সীমান্তে মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি অপরাধীদের ‘হত্যার পরিবর্তে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনার’ জন্য বিজিবি মহাপরিচালক ‘সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান’ জানান বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

সেখানে বলা হয়, “সীমান্তে হত্যার ঘটনা অদূর ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে বিএসএফ মহাপরিচালক আশ্বাস প্রদান করেন।”

বিজিবি মহাপরিচালক মাদক, অস্ত্র, গবাদি পশু, জাল মুদ্রা, স্বর্ণ চোরাচালানের মত আন্তঃসীমান্ত অপরাধ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এসব অপরাধ দমনে বিএসএফের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

“বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ মাদক পাচারের ফলে উভয় দেশের যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়েছে, যা উভয়ের জন্যই বিপদজনক এবং এটাকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা দরকার।”

চোরাকারবারীদের সম্পর্কে তাৎক্ষণিক ও দরকারি তথ্য আদান-প্রদান এবং প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে দুই পক্ষ বৈঠকে সম্মত হয় বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

সেখানে বলা হয়, “প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ভারতীয় নাগরিক এবং বিএসএফ সদস্যরা প্রায়শই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে যা দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে- এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন।

“উভয় পক্ষই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম/সীমানা লঙ্ঘন থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয় এবং একই সাথে উভয় বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সীমান্তের নিয়মনীতি বজায় রাখার ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়।”

উভয় পক্ষ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখতে এবং আস্থা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে সম্মত হওয়ার পাশাপাশি আগে না জানিয়ে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

মহাপরিচালক পর্যায়ের পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন আগামী বছর এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় আয়োজনের বিষয়েও তারা একমত হন।  

সম্মেলন শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের শনিবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।