কোভিড-১৯: যুক্তরাজ্য ফেরতদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বাড়ল

যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে যাদের সঙ্গে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ সনদ থাকবে না, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সাত দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2020, 08:19 AM
Updated : 23 Dec 2020, 05:09 PM

তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি যাতে বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে, সেজন্য সতর্কতা হিসেবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বুধবার ঢাকার আশকোনার কোয়ারেন্টিন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনটি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, যারা ইউকে থেকে আসবে, তাদের (সনদ না থাকলে) সাত দিন কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে।”

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের ‘অত্যন্ত সংক্রামক’ ওই নতুন ধরনটির সন্ধান মেলে, যা এখন লন্ডনসহ ইংল্যান্ডের বেশ কিছু এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ভাইরাসের ওই ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসেও পৌঁছে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় প্রতিবেশীসহ ৪০টির বেশি দেশ যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে; বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

ঢাকার আশকোনার কোয়ারেন্টিন সেন্টারে বুধবার ভ্রাম্যমাণ আরটি-পিসিআর ল্যাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই বলে আশ্বস্ত করেছে যে, যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে অনেক বেশি শঙ্কিত হওয়ার মত কিছু এখনও পাওয়া যায়নি।

আশকোনার অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, সাত দিন কোয়ারেন্টিন শেষে যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। পরে তারা বাড়িতে গিয়ে হোম কোয়ারেন্টিন করবেন।

যুক্তরাজ্য থেকে যারা আসবেন, তাদের জন্য বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে আলাদা লাইন করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জাহিদ মালেক।

“সেখানে এসে তারা আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় কাজ সারবেন। আমরা চাই না নতুন ধরনের করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক।”

বর্তমানে করোনাভাইরাসের ‘নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট ছাড়া দেশে এলে বাধ্যতামূলকভাবে ৭২ ঘণ্টার কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ এখন পরিস্থিতি ‘পর্যবেক্ষণ’ করছে।

“আমরা বসে নেই। ফ্লাইট বাতিল করা হবে কিনা তা আলোচনায় আছে। আমরা অতি তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।”

দেশে আপাতত নতুন করে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারির কোনো পরিকল্পনা নেই জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “লকডাউনে যাবার মতো অবস্থা হয়নি, তাই সে চিন্তা করছি না। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার সক্ষম হয়েছে।”

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, সেজন্য আলাদা কোনো চিকিৎসার দরকার আছে কিনা, তা বুঝতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে।

আশকোনা কোয়ারেন্টিন সেন্টারে জিন এক্সপার্ট ল্যাব এবং ভ্রাম্যমাণ আরটি-পিসিআর ল্যাবের উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, “আজকে যেসব পরীক্ষা উদ্বোধন করা হল, তাতে এখানে নমুনা পরীক্ষা করতে পারব। এটা করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় সাহায্য করবে।”

ভ্রাম্যমাণ আরটি-পিসিআর ল্যাবটি পরিচালনা করবে ডিএমএফআর মলিকিউলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনোস্টিকস।

বক্তব্য দেওয়ার আগে ভ্রাম্যমাণ আরটি-পিসিআর ল্যাবের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এই ল্যাব পরিচালনা করবে ডিএমএফআর মলিকিউলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনোস্টিকস।

এই ল্যাব প্রয়োজনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাবে এবং মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করবে। নমুনা দেওয়া ব্যক্তি পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে জানতে পারবেন।

জরুরি প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পাঞ্চলে গিয়েও নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করবে এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাব।

আর বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোভিড-১৯ আছে কি না তা জানতে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হবে আশকোনা হজ ক্যাম্পে নতুন চালু হওয়া জিন এক্সপার্ট ল্যাবে।

অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা, আশকোনা কোয়ারেন্টিন সেন্টারের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুর রহমান, ডিএমএফআর মলিকিউলার ল্যাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফাইজুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।