বর্তমানে ঢাকায় এক হাজার লিটার পানি ব্যবহারে ১৪ টাকা করে বিল দিতে হয়। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে যেমন ব্যবহারের ভিন্নতার উপরে ইউনিট প্রতি মূল্য পরিবর্তিত হয়, তেমনি বেশি পানি ব্যবহারের জন্য গ্রাহককে বেশি হারে বিল দিতে হবে বলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান জানিয়েছেন।
শনিবার কারওয়ানবাজারে ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে নিম্ন আয়ের এলাকার ‘আদর্শ গ্রাহকদের’ সম্মাননা জানাতে ঢাকা ওয়াসার বুড়িগঙ্গা হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই পরিকল্পনা জানান সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান।
অনুষ্ঠানে নিম্ন আয়ের এলাকার ৭ হাজার ৪৮৩ জন বৈধ গ্রাহকের মধ্যে ২৫ জন গ্রাহককে সম্মাননা দেওয়া হয়। ঢাকা ওয়াসা, দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র-ডিএসকে ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশ যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১১ সাল থেকে ঢাকার বস্তি এলাকায় বৃহৎ পরিসরে বৈধ পানির সংযোগ দেওয়া শুরু হয়।
পরে তাকসিম এ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকা ওয়াসা দুটি পদ্ধতিতে পানির দাম নির্ধারণের পরিকল্পনা করছে। এর একটি ‘প্রোগ্রেসিভ বিলিং’, আরকেটি এলাকাভিত্তিক।
“প্রোগ্রেসিভ বিলিংয়ে গ্রাহক যত বেশি পানি খরচ করবে, তত বেশি বিল দেবে। এলাকাভিত্তিক বিলিংয়ে যেগুলো অভিজাত এলাকা, জমি-ফ্ল্যাটের দাম বেশি সেসব এলাকায় আলাদা একটা পানির বিল হবে। তবে এটা নিয়ে আরও অনেক আলোচনার প্রয়োজন আছে। এগুলো নিয়ে আমরা সামনে অনেকগুলো সেমিনার করব।”
অনুষ্ঠানে তাকসিম এ খান বলেন, গ্রাহককে উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে পানি দেওয়া হচ্ছে। বাকিটা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।
“দুঃখজনক হল, এই ভর্তুকি উচ্চবিত্তরাও পাচ্ছেন, যদিও তাদের তা পাওয়া উচিত নয়। নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যবহারের পানির দাম বাড়বে না, তবে কমানো হয়ত সম্ভব হবে না। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় পানির দাম বাড়বে।”
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ঢাকায় এক হাজার লিটার পানি ১৪ টাকায়, চট্টগ্রামে ১২ টাকায় সরবরাহ করা হয়।
“ভারতের দিল্লিতে এক হাজার লিটার পানির দাম নেওয়া হয় ৪৩ রুপি, তবে শহরতলীতে পানির দাম কম। কারণ শহরতলীতে নিম্ন আয়ের মানুষ বাস করে।”
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ২০১০ সালে ঢাকা শহরের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ বৈধ পানির সংযোগের বাইরে ছিল। এখন ঢাকার প্রায় শতভাগ মানুষ বৈধভাবে পানি পায়।
তিনি বলেন, “এক সময় কড়াইল বস্তিতে মাস্তানদের মাধ্যমে পানি দেওয়া হত। আমরা সেই অবস্থার পরিবর্তন করেছি। আগামী বছরের মধ্যে ঢাকার শতভাগ বস্তি বৈধ সংযোগের আওতায় আসবে।”
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী উত্তম কুমার রায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের (পানি সরবরাহ অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, ডিএসকের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মাহমুদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।