আবরার রাহাতের মৃত্যু: প্রথম আলো সম্পাদকের মামলার কার্যক্রম হাই কোর্টে স্থগিত

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2020, 07:09 AM
Updated : 13 Dec 2020, 07:53 AM

মতিউর রহমানের মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেয়।

মতিউর রহমানের ক্ষেত্রে মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে ওই রুলে।  

হাই কোর্টে মতিউর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।

মোস্তাফিজুর রহমান খান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বছর নভেম্বরে কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর পর তার বাবার করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে গত ১২ নভেম্বর কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হককে বাদ দিয়ে বাকি নয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

“এই প্রেক্ষিতে গত ৬ ডিসেম্বর আমরা মতিউর রহমানের ক্ষেত্রে হাই কোর্টে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করি। আজকে শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করেছে। সেই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উনার ক্ষেত্রে আপাতত ছয় মাসের জন্য মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।”

কোন যুক্তিতে মামলা বাতিল চাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, “আমাদের বক্তব্য ছিল, মামলার পুলিশ প্রতিবেদনে এই ধরনের কোনো অভিযোগ নাই যে মতিউর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের কোনো অভিযোগ নাই যে মতিউর রহমান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করার জন্য সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন। এ ধরনের কোনো অভিযোগ নাই যে ঠিকাদার বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানে বিদুৎ সরবরাহের কাজ করছিল, সে ঠিকাদার বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্ষেত্রে উনার কোনো ভূমিকা ছিল বা অনুষ্ঠানের বিদুৎ সরবরাহের কাজটা উনি তদারকি করেছেন। এই ধরনের কোনো অভিযোগ নেই।

“সুতরাং উনার বিরুদ্ধে যে তর্কিত অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, সে অভিযোগ প্রযোজ্য না। সুতরায় উনার বিরুদ্ধে এ মামলাটা চলানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। উনাকে এ মামলা দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।”

নাইমুল আবরার রাহাত

মোহাম্মদপুরে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে গত বছর ১ নভেম্বর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় নবম শ্রেণির ছাত্র আবরার রাহাত। মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল প্রথম আলোর কিশোর সাময়িকী কিশোর আলো। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান কিশোর আলোর প্রকাশক; আর কিশোর আলোর সম্পাদক হলেন আনিসুল হক।

ওই ঘটনায় আবরারের বাবা মো. মুজিবুর রহমান গত ৬ নভেম্বর প্রথম আলো সম্পাদকসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে এ মামলা করেন।

তদন্ত শেষে গত ১৬ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আলিম।

সেখানে মোট দশজনকে আসামি করে বলা হয়, নাইমুল আবরারের মৃত্যুর পেছনে কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের ‘অবহেলার প্রমাণ’ পাওয়া গেছে।

অভিযোগে বলা হয়, অনুষ্ঠানের জন্য যে বিদ্যুৎসংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল, তা ‘অরক্ষিত’ ছিল। ঘটনাস্থলের খুব কাছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থাকলেও আবরারকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কায়সারুল ইসলাম সেদিনই অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে তাদের সবাই আদালত থেকে জামিন নেন।

নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে কর্মসূচি পালন করেছিলেন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

এরপর গত ১২ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হককে বাদ দিয়ে নয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষগ্রহণ শুরুর জন্য ১৪ ডিসেম্বর তারিখ রাখেন।

আনিসুল হকের অব্যাহতিতে সেদিন অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন নাইমুল আবরারের বাবা মো. মুজিবুর রহমান।

সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, “যিনি অবহেলার জন্য প্রধান দায়ী, তিনিই অব্যাহতি পেলেন। এটা কেমন  হল! আদেশ বিস্তারিত দেখে সিদ্ধান্ত নেব উচ্চ আদালতে যাব কিনা।”

মতিউর রহমান ছাড়া অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মহিতুল আলম, প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহপরান তুষার ও শুভাশীষ প্রামাণিক, অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জসীম উদ্দিন, মোশাররফ হোসেন, সুজন ও কামরুল হাওলাদার।

দণ্ডবিধির ৩০৪ এ ধারার এ মামরায় আসামিদের অবহেলার ফলে নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ড হতে পারে।