২০২২ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু খুলবে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব

দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2020, 08:47 AM
Updated : 10 Dec 2020, 08:47 AM

ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু এখন বাস্তব।”

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব যখন এই ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তার আধা ঘণ্টা আগে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর ঠিকঠাক বসানো হয় টু-এফ নম্বর স্প্যানটি।

এর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এই সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমাণ হয়; তৈরি হয় রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ।

পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসার কথা তুলে ধরে আনোয়ারুল বলেন, “নাও ইট ইজ ফিজিক্যালি কমপ্লিট।… আই থিঙ্ক, বাই জুন ২০২২, উই উইল ওপেন দ্য পদ্মা ব্রিজ।”

অবশ্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সপ্তাহখানেক আগে বলেছিলেন, এক বছরের মধ্যেই সেতুটি চালু করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

নিজের মোবাইলে থাকা পদ্মা সেতুর পুরো কাঠামোর একটি ছবি অনুষ্ঠানস্থলের প্রোজেক্টরে দেখিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আমি আট বছর সেতু বিভাগের সচিব ছিলাম। ফলে আমি এখনও এর দেখাশোনা করে থাকি।”

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুর কাদের জানিয়েছেন, সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমাণ হওয়ায় এখন দ্বিতল এই সেতুর ঢালাইয়ের কাজ, অ্যাপ্রোচ রোড ও ভায়াডাক্ট প্রস্তুত করা, রেলের জন্য স্ল্যাব বসানো হয়ে গেলেই এটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী হবে।

১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ই পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তা শুরু হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে পুনরায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে আসে বিশ্ব ব্যাংক।

কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে থাকে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দরপত্র মূল্যায়ন করে পাঁচ দরদাতাকে বাছাই করে তা বিশ্ব ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য পাঠানো হলেও সংস্থাটি তা ঝুলিয়ে রাখে।

এরপর পদ্মা সেতুতে ‘সম্ভাব্য দুর্নীতির’ অভিযোগ আনে বিশ্ব ব্যাংক। দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়।

শেষ পর্যন্ত নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় সেই বিপুল কর্মযজ্ঞ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মূল সেতুর নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান।

মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর।

এরপর করোনাভাইরাস মহামারী আর বন্যার মধ্যে কাজের গতি কমে যায়। সব বাধা পেরিয়ে অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই।

৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। তাতে মোট দেশজ উৎপাদন এক দশমিক দুই শতাংশ বাড়বে এবং প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমবে বলে সরকার আশা করছে।