জাহাজে চড়ে ভাসানচরের পথে ১৬৪২ জন রোহিঙ্গা

কক্সবাজারের উখিয়া থেকে নিয়ে আসা ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে মোট সাতটি জাহাজ।

রিয়াজুল বাশারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2020, 04:33 AM
Updated : 4 Dec 2020, 05:29 AM

শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার পর চট্টগ্রামের বোট ক্লাব, আরআরবি ও কোস্টগার্ডের জেটি থেকে জাহাজগুলো ছেড়ে যায় বলে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমকেজেড শামীম জানিয়েছেন।

ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য এই রোহিঙ্গাদের বুধবার রাতেই উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো করা হয় কয়েক ডজন বাস।

বৃহস্পতিবার সেসব বাসে করে মোট পাঁচটি কনভয়ে উখিয়া থেকে তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।

রোহিঙ্গাদের বহনকারী বাসগুলোর সামনে ও পেছনে ছিল র‌্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা।

চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর রাতে তাদের রাখা হয় বিএএফ জহুর ঘাটির বিএএফ শাহিন স্কুল ও কলেজের ট্রানজিট ক্যাম্পে।

নোয়াখালীর ভাসানচরে যেতে শুক্রবার চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঘাঁটি থেকে জাহাজের উদ্দেশে যাত্রা করছেন রোহিঙ্গারা। ছবি: রিয়াজুল বাশার

শুক্রবার সকালে তাদের নৌবাহিনীর ছয়টি এবং সেনাবাহিনীর একটি জাহাজে তোলা হয় ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জাহাজের ডেকে বেঞ্চ বসিয়ে সবার বসার ব্যবস্থা হয়।

নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, তাদের দুটো জাহাজে করে এই রোহিঙ্গাদের ১০১৯টি লাগেজ বৃহস্পতিবারই ভাসানচরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের আরও আটটি জাহাজ এই কনভয়ের সঙ্গে ভাসানচরে যাচ্ছে।

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের বোট ক্লাব, আরআরবি ও কোস্টগার্ডের জেটি থেকে শুক্রবার সকালে রোহিঙ্গাদের নৌবাহিনীর ছয়টি এবং সেনাবাহিনীর একটি জাহাজে তোলা হয় ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জাহাজের ডেকে বেঞ্চ বসিয়ে সবার বসার ব্যবস্থা করা হয়। ছবি: রিয়াজুল বাশার

মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে আগেই ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়েছিল।

এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে দেখার জন্য ভাসান চরে পাঠানো হয়।

তারা ফেরার পর তাদের কথা শুনে রোহিঙ্গাদের একাংশ ভাসান চরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলে জানানো হয় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।

তবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারের এই উদ্যোগ থেকে দূরত্ব রেখে চলেছে।

নোয়াখালীর ভাসানচরে যেতে শুক্রবার চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঘাঁটি থেকে জাহাজের উদ্দেশে যাত্রা করছেন রোহিঙ্গারা। ছবি: রিয়াজুল বাশার

বুধবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নেওয়ার যে পরিকল্পনা সরকার করেছে, তার সঙ্গে জাতিসংঘের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।

ভাসান চরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যেন সব তথ্য জেনে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।

সেখানে বলা হয়, “এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে, অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।”

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও (এইচআরডব্লিউ) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।